ভল্ট থেকে ৭৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা
ছবি: সংগৃহীত
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি লিমিটেড ছেংগারচর বাজার শাখার ক্যাশ ভল্ট থেকে ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার দীপংকর ঘোষ (৩৮) উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীপংকর ঘোষ মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামের বলাই ঘোষের ছেলে।
এ ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি লিমিটেড ছেংগারচর বাজার শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ মিয়া (৪০) সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি লি. ছেংগারচর বাজার শাখার অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন দীপংকর ঘোষ। গত ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার দীপংকর ঘোষ ব্যাংকে না আসলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে কল করলে তিনি জানান, বাবা অসুস্থ আসতে দেরি হবে। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ব্যাংকে না আসলে পুনরায় দীপংকর ঘোষের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। একপর্যায়ে প্রকৃত অবস্থান জানার জন্য তার স্ত্রী আঁখি সাহার মোবাইলে কল দিলে তিনি বলেন, আমার স্বামী বেলা ১২টার দিকে অফিসের উদ্দেশ্যে ঢাকার বাসা ত্যাগ করেন।
আরও জানা যায়, বিকেল হয়ে গেলেও দীপংকর ঘোষ ব্যাংকে উপস্থিত না হওয়ায় ব্যাংকের ভল্ট খোলা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে তার কার্যকলাপ সন্দেহজনক পরীলক্ষিত হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি লিমিটেড ছেংগারচর বাজার শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ মিয়া।
দীপংকর ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং ব্যাংকের ভল্টের থাকায় নগদ টাকা পরিমাণ যথাযথ আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মোতাবেক গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) মতলব উত্তর থানার একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ইউসুফ মিয়া।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) জিডির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং থানা পুলিশের উপস্থিতিতে মিস্ত্রি দ্বারা ভল্টের গ্রিল গেট কেটে এবং চাঁদপুরস্থ প্রধান শাখায় রক্ষিত ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ভল্ট খোলা হয়। পরবর্তীতে সকালের উপস্থিতিতে গণনা করে ভল্টে ২৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮ টাকা ৭১ পয়সা সরেজমিনে পাওয়া যায়। ব্যাংকের ক্যাশ পজিশন অনুযায়ী ক্যাশ পজিশন ১ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮ টাকা ৭১পয়সা ছিল। অর্থাৎ ক্যাশ পজিশন অনুযায়ী গণনাকালে ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা কম পাওয়া যায়।
মামলায় আরও উল্লেখ্য আছে, ব্যাংকের ক্যাশিয়ার দীপংকর ঘোষ বিগত কিছুদিন যাবত মাঝে মধ্যে একটি কাঁধের ব্যাগ নিয়ে আসতো এবং ওই ব্যাগ নিয়ে অফিস ত্যাগ করত। তিনি ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকায় ব্যাংকের ভল্টের একটি চাবি তার কাছে রক্ষিত থাকাতে কূটকৌশল অবলম্বন করে সে নিজে অথবা অজ্ঞাতনামা বিবাদীগণ ব্যাংকের ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি লিমিটেড ছেংগারচর বাজার শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, এ বিষয়ে আমি বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি মামলা করেছি। ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে অডিট করে গেছেন এবং থানার পুলিশ তদন্ত করছে বিষয়টি নিয়ে।
মতলব উত্তর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি লিমিটেড ছেংগারচর বাজার শাখার ক্যাশ ভোল্ট থেকে ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা নেওয়ায় ব্যাংকের ক্যাশিয়ার দীপংকর ঘোষ ও অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন।