দুদকের নজরে ৩ শতাধিক প্রভাবশালী, তালিকায় রয়েছে ডজনের বেশি সাবেক আমলা
ছবি: সংগৃহীত
আন্দোলনের তোপের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগ করে ভারতে অবস্থান নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি এবং আমলা থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে যারা নানা রকম দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়েছেন তাদের সকলের তথ্যই এখন সামনে আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসনের শীর্ষ পদে থাকা কর্মকর্তাদের সম্পদের খোঁজে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, ব্যাংক ও শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, কমিশন বাণিজ্য, সরকারি ও বেসরকারি জমি-সম্পত্তি দখল, লুটপাটসহ নানা অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
এরই মধ্যে তিন শ’ জনের তালিকা ধরে এগোতে শুরু করেছে মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন আবদুল্লাহ কমিশন। দুই সপ্তাহের বেশি সময়ে ৭০ জনের বেশি সংখ্যক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও পুলিশের কর্মকর্তাসহ সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। ২৬ জন সাবেক এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
দেশের জাতীয় একটি গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সংস্থাটির গোয়েন্দা ইউনিটের তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায় থেকে অভিযোগ গ্রহণ করে ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো যাচাই বাছাই করে তাৎক্ষণিকভাবে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, তৎকালীন সরকারের মেগা প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, দুর্নীতি ও পাচারের ঘটনার অভিযোগ বিভিন্ন সময় দুদকের কাছে এলেও সংস্থাটির চেয়ারম্যান/কমিশনাররা তাদের ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ না নিলেও এবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে ১২টির বেশি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। সংস্থাটির গোয়েন্দা ইউনিটের তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায় থেকে অভিযোগ গ্রহণ করে ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো যাচাই বাছাই করে তাৎক্ষণিকভাবে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
এদিকে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ভাষ্যমতে, সরকারি দল ক্ষমতায় থাকার কারণে নানা সময়ে দুদকে অভিযোগ আসলেও তা আমলে নিয়ে কাজ করতে পারেনি দুদক। তবে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকায় কোনো চাপ নেই। যেকোনো দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে পারছে দুদক।
দুদকের একজন উপপরিচালক আরেকটি জাতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অনুসন্ধান তালিকায় প্রথমদিকে রয়েছেন বিগত সরকারের আমলের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবরা। এসব শীর্ষ আমলা বিগত সরকারের আমলে অনেক প্রভাবশালী ছিল। তারা তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি খাটিয়ে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগিরই সাবেক এই আমলাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক না কেন—যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের তপশিলভুক্ত অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণিত হলে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে, কোর্টে মামলা দাখিল করা হচ্ছে। দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, কাউকেই ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।