অনুসন্ধান কমিটিতে নিয়োগ পেলেন যারা
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছে। শনিবার (৫ ফ্রেব্রুয়ারি) মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়।
অনুসন্ধান কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান, বাংলাদেশ মহা হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছুহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
জেনে নেই তাদের সম্পর্কে:
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বাংলাদেশের আপিল বিভাগে কর্মরত। তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে জন্ম নেয়া হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসএস (সম্মান) এবং এমএসএস (অর্থনীতি) পরে আইনে এলএলবি করেন। এরপর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসাবে পেশা জীবন শুরু করেন। তিনি জেলা আদালত, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেন।
২০০৯ সালে তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০১১ সাল থেকে বিচারপতি হিসাবে কাজ শুরু করেন।
এর আগে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ থেকে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক হিসাবে যোগ দেন। ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ওই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারপার্সন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান
বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত। তিনি ২০২০ সালের ৩০মে এ পদে নিয়োগ পান। দুই বছর আগে থেকে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জুডিসিয়াল সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি আইন কমিশনে যোগ দেন। বিচার ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১৯৯১ সাল থেকে পূর্ব তিমুরে এবং ২০০৬-২০১১ সাল পর্যন্ত সুদানে প্রেষণে বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। জেলা জজ হিসাবে পদোন্নতি পাওয়ার পর ২০১২ সালে তিনি প্রধান বিচারপতির বিশেষ কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ পান। ২০১৪-২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে কর্মরত থাকার সময় ২০১৮ সালের ৩০মে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পান।
মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী
বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। তিনি পদাধিকার বলে অনুসন্ধান কমিটিতে আছেন। তিনি ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার আগে অর্থ বিভাগের সচিব ছিলেন।
১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অডিট নিরীক্ষা ও হিসাবের একজন কর্মকর্তা হিসাবে পেশাজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টস, কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স ও অর্থ বিভাগের উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করার পর যুক্তরাজ্য থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। এর আগেও রাষ্ট্রপতির ঘোষিত নির্বাচন কমিশন অনুসন্ধান কমিটিতে এই পদের তৎকালীন কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছিলেন।
মোঃ সোহরাব হোসাইন
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান তিনি। তিনিও পদাধিকার বলে এই কমিটির সদস্য হয়েছেন। ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি পিএসসির চেয়ারম্যান।
এই পদের দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখান থেকে অবসর গ্রহণের পর তাকে সরকার পিএসসির চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেয়।
১৯৮৬ সালে সহকারী কমিশনার হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে পেশাজীবন শুরু করেন হোসাইন। তিনি ইউনেস্কোয় বাংলাদেশ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের মহাসচিব হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। নোয়াখালীতে জন্ম নেয়া মো. সোহরাব হোসাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। এর আগেও রাষ্ট্রপতির ঘোষিত নির্বাচন কমিশন অনুসন্ধান কমিটিতে এই পদের তৎকালীন কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছিলেন। গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করা হবে অনুসন্ধান কমিটির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন
সাবেক আইন সচিব ছহুল হোসাইন ওয়ান ইলেভেনের পর সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল, সেখানে একজন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। সেই কমিশনের আয়োজনেই ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি অবসরে ছিলেন। তবে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় তিনি সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করতে মনোনয়ন পত্র কিনেছিলেন। বিচারক হিসাবে পেশাজীবন শুরু করে দীর্ঘদিন জেলা জজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন ছহুল হোসাইন।
আনোয়ারা সৈয়দ হক
কথাসাহিত্যিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে পরিচিতি রয়েছে আনোয়ার সৈয়দ হকের। তিনি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও শিশুসাহিত্য রচনা করেছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি একুশ পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশের খ্যাতনামা আরেকজন সাহিত্যিক প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হকের স্ত্রী তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে মেডিকেল কোরে লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বিমান বাহিনীর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে লন্ডন চলে যান। সেখানে মনোবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সহকারী প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। তিনি জাতীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক, মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।