জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের এদিনে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) ৭৭ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
তবে এবার দেশের রাজনৈতিক আবহ ও বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আয়োজনের সংখ্যা একেবারেই কম। জাতীয় কবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমি একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আজ সকাল ১১টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নজরুলবিষয়ক একক বক্তৃতা দেবেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক গবেষক অধ্যাপক মাহমুদ শাহ কোরেশী। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহা. নায়েব আলী।
এর আগে সকাল ৮টায় জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে বাংলা একাডেমি। সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন মানবতার জয়গান গেয়ে গেছেন। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের সংগ্রামে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। প্রেমের মাধুর্যভরা কথা আর সুর সৃষ্টির পাশাপাশি গেয়েছেন শোষিত-বঞ্চিতের শিকল ভাঙার গান।
কবি নিজেই লিখেছেন, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য’! কবি নিজে বিশেষ করে শৈশব-কৈশোরে সয়েছেন চরম দারিদ্র্যের কশাঘাত। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান পুরুষ তিনি। সাহিত্যজগতে তাঁর আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো। প্রস্থানও অনেকটা তাই। দুরারোগ্য ব্যাধি ও বাকশক্তি হারিয়ে ফেলায় শেষ জীবনের অনেকটা সময় ছিলেন সৃজনশক্তিহীন।
নজরুল যখন লিখতে শুরু করেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত, বাংলা সাহিত্যের মহীরুহে পরিণত। সেই রবীন্দ্রনাথের প্রভাববলয়ের বাইরে অবস্থান করে নজরুল সৃষ্টি করেন স্বকীয় বলয়। তাঁর সেই নিজস্ব স্বর ও সুর কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। বাংলা কবিতায় নতুন ধারার প্রবর্তক নজরুল বাংলা গজলেরও পথিকৃৎ। কবিতা, কথাসাহিত্য, সংগীত, সাংবাদিকতাসহ সংস্কৃতির নানা খাতে স্বচ্ছন্দ বিচরণ করেছেন নজরুল। তবে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসককে লক্ষ করে ‘যত সব বন্দী-শালায়/আগুন জ্বালা/আগুন জ্বালা, ফেল উপাড়ি’র মতো চরণ লেখা নজরুলের জীবন মোটেও মসৃণ ছিল না। লেখার জন্য জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে।
১৯২১ সালের ডিসেম্বরে কবি লেখেন ‘ভাঙার গান’ ও ‘বিদ্রোহী’। এরই মধ্যে শত বছর পার করেছে তাঁর এই দুই অমর সৃষ্টি। বিভিন্ন দিক থেকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার অভিনবত্ব তাঁর কাব্যকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। বলা হয় ‘ভাঙার গান’ ও ‘বিদ্রোহী’ বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে বদলে দিয়েছে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আজও পাঠক-গবেষকদের কাছে সমান সমাদৃত। অনেক সমালোচক বলেছেন, এটি গোটা বিশ্বেই বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোর অন্যতম।
সাংবাদিকতা ও পত্রপত্রিকা সম্পাদনা নজরুলের কর্মজীবনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯২০ সাল থেকে অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত নজরুল সান্ধ্য দৈনিক ‘নবযুগ’, দৈনিক ‘মোহাম্মদী’, দৈনিক ‘সেবক’, অর্ধসাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’, সাপ্তাহিক ‘লাঙ্গল’, সাপ্তাহিক ‘গণবাণী’, সাপ্তাহিক মাসিক ‘সওগাত’ ও দৈনিক ‘নবযুগ’ (নবপর্যায়) পত্রিকার সঙ্গে কর্মী, মালিক বা সম্পাদক হিসেবে নানা ভূমিকায় যুক্ত ছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। পূর্ব ও পশ্চিম উভয় বাংলায় যাতায়াত থাকলেও তাঁর সৃষ্টিশীল কাজের ক্ষেত্র ছিল রাজধানী শহর কলকাতা। ১৯৪২ সালের জুলাই থেকে ১৯৭৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৪ বছর কবি অসুস্থ হয়ে নির্বাক জীবন কাটান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ নিয়ে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে সপরিবারে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কবি নজরুলকে ১৯৭৪ সালে এক বিশেষ সমাবর্তনে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁকে নাগরিকত্ব দেয় বাংলাদেশ সরকার। ওই বছরই একুশে ফেব্রুয়ারি তাঁকে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করা হয়। নজরুলের লেখা ‘চল চল চল’ গানটি বাংলাদেশের রণসংগীত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বিদ্রোহী কবি।