রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে যা বললেন উপদেষ্টা নাহিদ ও হাসনাত আব্দুল্লাহ
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাত্রা ১৫ বছর আগে শুরু হলেও সম্প্রতি এই আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা কমিটিতেও রয়েছে শিক্ষার্থীদের দু'জন সমন্বয়ক।
এসবের মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন হবে কি না এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েকদিন ধরে। এবার এ নিয়ে মুখ খুলেছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
এ বিষয়ে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে তার ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট করেছেন। ফেসবুক পোস্টে নাহিদ লিখেছেন, রাজনৈতিক দল গঠন আমাদের গণঅভ্যুত্থানের অভিমুখ না। এই মুহূর্তে প্রয়োজন অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, নতুন করে দেশ গঠন-সংস্কার ও অভ্যুত্থানের স্পিরিট ও জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা। ছাত্র-জনতা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করবে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের এক দফার অংশ ছিল। সেজন্য বিস্তর কাজ ও রাজনৈতিক কার্যক্রম প্রয়োজন। জনগণের সঙ্গে আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা প্রণয়ন করতে চাই।’ রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের স্পিরিট রক্ষায় সামাজিক-রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবে।
একই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়গুলো আমরা গণমাধ্যম থেকেই জানছি। আমরা সারাদিন জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়েই ব্যস্ত আছি। রাজনৈতিক বিষয়গুলো আলাপ-আলোচনার বাইরে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এগুলো নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে চিন্তা করার ফুসরত পাইনি। আমাদের মূল কনসার্ন এখন আহতদের পাশে দাঁড়ানো, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ভূমিকা রাখা।
এই সমন্বয়ক আরও বলেন, মানুষের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ফলে তারা আমাদের নিয়ে চিন্তা করছে ও ভাবছে। আমরা মনে করি ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত থাকা উচিত। ফলে জনমত গঠন হবে। এতে রাজনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি গড়ে ওঠে। সুতরাং আমরা মনে করি জনমত গঠন হওয়া উচিত। পরবর্তীতে জনমত গঠনের ভিত্তিতে যদি প্রয়োজন হয় রাজনৈতিক কাঠামো গঠনের বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে আগামী এক মাসের মধ্যেই জানা যাবে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্তৃক গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল গঠনের কথা বলা হয়নি। রয়টার্সের প্রতিবেদনে ভুল রয়েছে দাবি করে মাহফুজ ওই পোস্টে লিখেছেন, রয়টার্সে দেওয়া আমার বক্তব্য ভুলভাবে এসেছে। আর সে ভুল বক্তব্যের বাজে বা উদ্দেশ্যমূলক অনুবাদ বাংলাদেশি মিডিয়া প্রচার করেছে।
তিনি জানান, রয়টার্সে আমার বক্তব্য ছিল, আমরা রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে এখনই ভাবছি না। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য আমরা কাজ করছি। গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখা এবং সরকারকে সংহত করা আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। রাষ্ট্র ও সমাজের নানা অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে আমরা আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা নিয়েও কাজ করব।