সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন সাইনোভিয়া ফার্মা পিএলসির ৩১ মাসের বেতন বকেয়া
বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাইনোভিয়া ফার্মা পিএলসি’র ৩৮০ জন ৩১ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা। তারা দ্রুত বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা বর্তমান সরকারের কাছে বেক্সিমকোর নিয়ন্ত্রণাধীন সাইনোভিয়া ফার্মার ৩৮০ জন শ্রমিক-কর্মচারীর পক্ষে যেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয় সে দাবিও করেছেন।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনটি ‘সাইনোভিয়া ফার্মা পিএলসির সাধারণ কর্মচারী’ ব্যানারে আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সভাপতি মো. মাহমুদ হাসান বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দোসর এবং তার নানাবিধ অপকর্মের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী ও পৃষ্ঠপোষক সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাইনোভিয়া ফার্মা পিএলসির নিগৃহীত এবং সর্বাপেক্ষা বঞ্চিত শ্রমিক-কর্মচারীরা আজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পেটের তাড়নায় এবং পরিবারসহ সদ্য স্বাধীন দেশে প্রাপ্য অধিকারসহ বেঁচে থাকার প্রয়োজনে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।
সদ্য বিদায়ী স্বৈরশাসক কীভাবে আইনি কাঠামোর অপপ্রয়োগ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসকে একটি ভিত্তিহীন মামলায় শাস্তি দিয়েছিল। যেখানে তিনি তার শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বাংলার ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ সুবিধা এবং মুনাফার অংশ প্রদান করেছিলেন। অন্যদিকে, সালমান এফ রহমান ২০২১ সালে দেশের স্বনামধন্য বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের (বর্তমানে সাইনোভিয়া ফার্মা পিএলসি) মালিকানা ও কর্তৃত্ব ক্রয় করে স্বৈরাচারী ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের ৩৮০ জন শ্রমিক কর্মচারীকে গত ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত (দীর্ঘ ৩১ মাস) সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে প্রাপ্য বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে।
এ বিষয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শ্রমিক- কর্মচারীদেরকে চাকরিচ্যুত না করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করলেও তা কখনোই সালমান এফ রহমানকে এ বিষয়ে বাধ্য করা হয়নি। তারা উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের আবেদন করে ব্যর্থ হলেও উক্ত আদেশ প্রতিপালনের কোনোরূপ প্রয়োজনীয়তা তারা অনুভাব করেনি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের উক্ত রায় ও আদেশের প্রতি দিনের পর দিন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অত্র শ্রমিক কর্মচারীদের এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছেন ঐ তথাকথিত সালমান এফ রহমান ও তার দোসররা।
সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ শ্রমিক-কর্মচারীদের দ্বারা গঠিত ট্রেড ইউনিয়নের (সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড ওয়ার্কার্স- এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন, বি-২২০৭) কার্যক্রমের বৈধতা দিয়েছেন এবং উক্ত ট্রেড ইউনিয়নের দায়ের করা অপর একটি মামলায় সিবিএ নির্বাচন করার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দিয়েছেন। বিগত প্রায় দেড় বছর এ মামলা দুটির দীর্ঘ শুনানি অন্তে রায় ও আদেশ ঘোষণার পর রায়ের কপি হাতে আসার আগেই সদ্য বিতাড়িত স্বৈরশাসকের তোষামোদি এক বিচারপতি মামলার বিষয়বস্তুর ওপর স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন।
উক্ত অবস্থাধীনে ৩৮০ জন শ্রমিক-কর্মচারী দীর্ঘ ৩১ মাস ধরে সব ধরনের বেতন-ভাতাদি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে এবং আজ তারা পরিবার-পরিজনসহ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমান সরকারের কাছে বেক্সিমকোর নিয়ন্ত্রণাধীন সাইনোভিয়া ফার্মার অত্র ৩৮০ জন শ্রমিক কর্মচারীর একটাই দাবি, তাদের পক্ষে যেন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং সালমান এফ রহমান কর্তৃক অনৈতিক উপায়ে সানোফিকে দখল করার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে অনুরোধ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব কুমার চক্রবর্তী, সদস্য আতাউর রহমান প্রমুখ।