মাঘের বৃষ্টিতে বাড়বে শীত
মাঘের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে। শীতের শেষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুক্রবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীতে শীতের তীব্রতা না থাকলেও উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিতে নাকাল জনজীবন। উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি ও হিমেল হাওয়া বেয়ে যাচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও দিনমজুররা রয়েছেন চরম ভোগান্তি।
রাজধানীতে শনিবার থেকেই বৃষ্টি থেমে যাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও নওগাঁর স্থানীয় আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এসব এলাকায় আরও ২-৩ দিন আবহাওয়া একই রকম থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে আগামীকাল সকাল ৯টার পর রাজধানীতে আকাশ পরিষ্কার হতে পারে।
তিনি জানান, শুক্রবার সকাল ৮টায় দিনাজপুরে সর্বোচ্চ ৩৩ মিলিমিটার এবং রংপুরে ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
সারাদেশ প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, শুক্রবার সকালে ৮ টায় দিনাজপুরে দিনের তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে, কুড়িগ্রামে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং নওগাঁয় ১৪ দশমিক ৮ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনাজপুরে কনকনে শীতের মাঝেই শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রায় ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস। দিনের তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। হালকা বাতাসের ঝাপটায় বাড়িয়ে দিয়েছে হাড়কাঁপানো শীতের তীব্রতা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য। বৃষ্টিতে আলু, টমেটো ক্ষেতসহ বীজতলা নষ্টের আশংকা করছেন কৃষকরা।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আবারও শৈত্য প্রবাহের কবলে পড়তে পারে দিনাজপুর। হালকা বৃষ্টিসহ বজ্রপাত শুরু হয়েছে। যোগ হতে পারে কনকনে শীতের তীব্র্রতার মাত্রা।
এদিকে টানা শৈত্যপ্রবাহের রেশ কাটতে না কাটতেই টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। শুক্রবার ভোর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে শোনা গেছে মেঘের গর্জনও। ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টির কারণে বেড়েছে শীত। বৃষ্টি, উত্তরের হিমেল হাওয়া আর কন কনে ঠান্ডায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। বিশেষ প্রয়োজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ। রাস্তা ঘাট ফাঁকা পড়ে আছে। টানা বৃষ্টির কারণে দিনমজুদের দুর্ভোগ বেড়েছে। এদিকে চলতি ইরি-বোরো চাষের মৌসুম শুরু হলেও শীত ও বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে আমন চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষকরা।
কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২০ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ অবস্থা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
নওগাঁয় পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে মাঘের শেষভাগে বৃষ্টির কারণে জেঁকে বসেছে শীত। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসে ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার মানুষজন। শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) জেলায় দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ৩১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া উপকেন্দ্র। জেলার উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৫-২০ কিলোমিটার বেগে হিমেল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া উপকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, 'শনিবারও এমন বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির পর শুক্রবার থেকে আগামী কয়েকদিন শীতের অনুভূতিও বাড়বে। এলাকাভেদে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। আরও দুই তিন দিন বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। এরপর কোনো কোনো এলাকায় তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীত বাড়তে পারে।'
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, নওগাঁয় কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।