আবেদ আলীর পরিবারের সবার রয়েছে ইউরোপের ভিসা
ছবি: সংগৃহীত
বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত আলোচিত আবেদ আলী জীবন, নামে বেনামে গড়েছেন শত কোটি টাকার সম্পদ। একজন সাধারন ড্রাইভার থেকে কীভাবে এত অর্থ-বিত্তের মালিক বনে গেলেন তিনি, জনমনে সেই প্রশ্নই উঠেছে। জানা গেছে, যে কোনো সময় দেশ ত্যাগের পরিকল্পনাও ছিলো তার। আর সেজন্যই আগেই পরিবারের সবার ইউরোপের ভিসা করে রেখেছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাত্র আট বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে পাড়ি জমান আবেদ আলী। সেখানে প্রথমে কুলির কাজ করতেন। এ সময় ফুটপাতে ঘুমাতে হয়েছে তাকে। এরপর গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অর্জন করেছেন বিপুল সম্পদ ও ক্ষমতা। দীর্ঘদিন ধরে ডাসার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য প্রচার প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর তথ্য। প্রায় একযুগ ধরে বিপিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত আবেদ আলী। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনীতির মাঠে-ময়দানে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে জনসংযোগ করেন আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। বাবা-ছেলে এলাকায় দান করেন দুই হাত ভরে। আবেদ আলী গ্রামের বাড়িতে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল ভবন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এ ছাড়াও তিনি রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে নির্মাণ করছেন গরুর খামার ও শপিং সেন্টার। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে কিনেছেন বিপুল সম্পদ।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকায়ও তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় একটি থ্রি-স্টার হোটেলও রয়েছে তার।
গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনকে এক কেজি করে মাংস দিয়ে গেছেন তিনি। সেই ভিডিও শেয়ার করেছেন নিজের ফেসবুকে।
এলাকাবাসীরা জানান, আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। লেখাপড়া করেছেন ভারতের শিলংয়ে। তারপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়েছেন। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
তবে আবেদ আলীর এ অপকর্মের কথা গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ছিল অজানা। গ্রামের সহজ-সরল মানুষ তাকে ‘ভালো’ মানুষ হিসেবেই জানতেন।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, আবেদ আলীর পরিবারের সবাই ইউরোপের ভিসা করে রেখেছেন আগেই। যে কোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি বলেন, যারা অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন করেছেন, তাদের নিয়ে সচেতন মহলের প্রশ্ন তোলা উচিত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাব।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেই অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী।