কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ককে হত্যার হুমকি, থানায় জিডি
ছবি: সংগৃহীত
কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ওই শিক্ষার্থী।
সোমবার (৮ জুলাই) রাতে হাটহাজারী মডেল থানায় তিনি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এর আগে, রোববার (৭ জুলাই) রাতে নাট্যকলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র খান তালাত মাহমুদ রাফির বাবার মোবাইলে কল করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। কোটাবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে তিনি প্রক্টর বরাবরও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে রাফি নিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ রিজভী এ ঘটনায় জড়িত বলে দাবি করছেন। হৃদয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
জিডিতে রাফি উল্লেখ করেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করায় তিনি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের দ্বারা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী খান তালাত মাহমুদ রাফি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রোববার রাতে আব্বুকে একটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। আমার বাবাকে ওই ব্যক্তি বলেন, আপনার ছেলেকে যদি কোটা আন্দোলন থেকে সরে যেতে না বলেন তাহলে হয়তো আপনার ছেলেকে আর পাবেন না, তার লাশটা পাবেন।’
‘দেখা যাবে যে কোথাও না কোথাও মেরে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে লাশটা অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হবে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে থানায় আমি একটা সাধারণ ডায়েরি করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে নম্বর থেকে কল করা হয়েছিল সেটা নিয়ে আমার সহযোদ্ধা ও সহপাঠীরা খোঁজখবর নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওটা আমার বিভাগের সিনিয়র ২০১৯-২০ সেশনের হৃদয় আহমেদ রিজভীর নাম্বার। তার বাড়ি নরসিংদী জেলায়। তিনি শাহ আমানত হলে থাকেন।’
হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, হত্যার হুমকির বিষয়ে কোনো জিডি হয়নি। ওই শিক্ষার্থী তার কোনো ক্ষতি হতে পারে এমন আশংকায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যেহেতু হত্যার হুমকি তার বাবাকে দেওয়া হয়েছে তিনিই স্থানীয় থানায় এ ব্যাপারে জিডি করতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অহিদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী গতকাল (রোববার) একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। লিখিত অভিযোগে সে একটি মোবাইল নম্বর দিয়েছে। এটা কার সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। আর যেহেতু তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে এটা ক্রিমিনাল কেস হয়ে গেছে। এটা পুলিশ তদন্ত করবে।’
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।
ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।
ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন। সর্বশেষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, তবে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে কোটা রাখা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।