দাবি আদায়ে আন্দোলনে অনড় কোটাবিরোধীরা
ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে বহাল থাকলেও তা প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে৷ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বিভাগ জানান কোটা বাতিলে হাইকোর্টের আদেশ অপরিবর্তিত থাকবে৷ আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরও কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন৷ টানা তিন দিন ধরে তারা শাহবাগে আছেন৷
আদালতের রায়কে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার বিরোধী দাবি করে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে কোটার সমাধান করবেন বলে তারা জানিয়েছেন৷
আপিল বিভাগের বৃহস্পতিবার আদেশ কোটা বহাল রাখতে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে কিনা এ বিষয়ে শুনানিতে আপিল বিভাগ বলেন, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক৷ রায় প্রকাশ হলে আপনারা নিয়মিত আপিল দায়ের করেন৷ আমরা শুনবো৷
রিটকারীদের পক্ষে এডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, আমাদের সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী দেশে না থাকায় আমরা শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেছিলাম৷ কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানির জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন৷ তিনি বলছিলেন-এটা নিষ্পত্তি না হলে নিয়োগ আটকে যাচ্ছে৷
আদালত তখন জানতে চান, এত আন্দোলন কিসের, রাস্তায় কী শুরু হয়েছে? আন্দোলনের চাপ দিয়ে কি হাইকোর্টের রায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন রাষ্ট্রপক্ষে বলেন- না না৷ এটা আমাদের কিছু নয়৷
আন্দোলন ছড়িয়েছে বিভিন্ন জেলায় কোটাবিরোধী এই আন্দোলন এখন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো৷ বৃহস্পতিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা৷ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান৷ আন্দোলনের নেমেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরাও৷ বৃহস্পতিবার তারা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন৷
এর আগে ২০১৮ সালে আন্দোলনের মুখে সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে৷ পরিপত্র জারি করে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কর্পোরেশনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোটা বাতিল করা হয়৷ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে৷ সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম গ্রেড (আগের ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড (আগের ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে৷
নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি পাঁচ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের এক শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়৷
এই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ বাতিল চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাত জন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন৷ গত ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট৷ রায়ে সরকারের পরিপত্র বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখার আদেশ দেয়া হয়৷ এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে ৪ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করে দেয় চেম্বার জজ আদালত৷
কোটার বিরুদ্ধে যুক্তি কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের একজন আসিফ মাহমুদ বলেন, হাইকোর্ট জনগণের দাবি ও প্রত্যাশার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে৷ আমরা শুরুতেই বলেছি এই রায় আমরা মানি না৷ আর আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দিয়েছে৷...আমরা মনে করি আমরা রাজপথে থেকেই কোটার একটা সমাধান নিয়ে ফিরব৷
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো কোটা থাকার এখন আর কেনো যুক্তি নাই৷ কারণ এখন যারা এই সুবিধা পাচ্ছেন তারা তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের৷ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের এখন আর এই সুবিধা নেয়ার বয়স নাই৷ তাদের নাতি-পুতিরা পাচ্ছেন৷ এটা হতে পারে না৷ মুক্তিযুদ্ধে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য ওই কোটা ছিলো৷ এখন তো আর দরকার নেই৷
আসিফ মাহমুদ জানান, শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি নয়, অন্য গ্রেডের চাকরিতেও তারা কোটার অবসান চান৷ এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ ভাগ কোট রাখার পক্ষে তারা৷
কোটার পক্ষে যে যুক্তি মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, আমরা আদালতের কাছে রিট করেছিলাম ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে৷ আদালত মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ ভাগ কোটা বহাল করেছে৷ আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি৷ আশা করি আপিল বিভাগেও আমরা ন্যায়বিচার পাবো৷ বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে কোটাবিরোধীদের পূর্ণাঙ্গ আপিল করতে বলেছেন৷ তাই আমরা দাবি করছি সরকার ২০১৮ সালের পরিপত্র যেন হাইকোর্টের রায় মেনে অবিলম্বে বাতিল করে৷
তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ ভাগ কোটা ছাড়া অন্য কোটার জন্য তারা রিট করেননি৷ ফলে আদালতের রায় অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া আর কোনো কোটা নেই৷ যারা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তারা এখন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলেরই দাবি করছে৷ তারা আদালতের রায়ও মানতে চান না দাবি করে তিনি বলেন, এর পেছনে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আছে৷ তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে মাঠে নামাচ্ছে৷ তারা ২০১৮ সালের আগেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলেরই আন্দোলন করেছিলো৷ তাদের সব আপত্তি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে৷