মেয়ের পরকীয়ার বলি সাবেক এমপির স্ত্রী সেলিনা: পিবিআই
মেয়ের পরকীয়ার বলি সাবেক এমপির স্ত্রী সেলিনা। ছবি: সংগৃহীত
হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পর সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সামসুদ্দোহা খান মজলিশের স্ত্রী সেলিনা খান মজলিশ মেহের হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই বলছে, বড় মেয়ে শামীমা তাহের পপির পরকীয়া সম্পর্কের কথা জেনে যান মা সেলিনা খান মজলিস। এ কারণে পরকীয়া প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে মাকে হত্যা করেন পপি। পরে এ হত্যাকাণ্ডকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রচার করে ঘটনা ধামাচাপা চেষ্টা করেন বড় মেয়ে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
এ হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন—মূল হত্যাকারী সাবেক এমপির বাসার বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি সুবল কুমার রায় (৫০), এমপিকন্যা শামীমা খান মজলিস ওরফে (পপি) এবং আরতি সরকার (৬০)।
পিবিআই প্রধান বলেন, দীর্ঘদিন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় মামলার তদন্ত কাজ। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে নির্দেশনা আসে। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করি। তদন্ত শুরু হলে আমরা ভিকটিমের বড় মেয়ে আসামি শামীমা খান মজলিশের পাশাপাশি বাকি দুই মেয়েকেও সন্দেহের মধ্যে রাখি। আমরা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি যে, ওই বাসায় কারা কারা আসতেন। জানতে পারি একজন ইলেকট্রিশিয়ান মাঝে মাঝে ওই বাসায় আসতেন। কিন্তু বহুদিন ধরে তার ওই বাসায় আসা-যাওয়া নেই। জানতে পারি তিনি বিগত ৩০ বছর ধরে সাভারে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে পাশেই তার একটি বড় মুদির দোকানও আছে।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আমরা তদন্তকালে যেসব তথ্য জানতে পারি তার মধ্যে বাসার সুইচ বোর্ডটি ভাঙা এবং সেখান থেকে দুটি তার বের করে রাখার একটা বিষয় উঠে এসেছিল। এরপর আমরা আসামি ইলেকট্রিশিয়ান সুবল কুমার রায়কে (৫০) নিয়ে আসি। সাবেক সংসদ সদস্য সামসুদ্দোহা খান মজলিশ তাকে পছন্দ করতেন, তাই আসামি সুবল কুমার রায় মাঝে মধ্যে সেখানে যাতায়াত করতেন। বাড়ির ইলেকট্রিকের কাজও করে দিতেন। ১৯৯৮ সাল থেকে সুবল কুমার রায় খান মজলিশের বাড়িতে যাতায়াত করতেন।
তিনি আরও বলেন, আসামি সুবল কুমার রায় গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, ভিকটিম সেলিনা খান মজলিশের (৬৩) বড় মেয়ে শামীমা খান মজলিশ তার স্বামীকে নিয়ে নিচতলায় বসবাস করতেন। সেখানে তিনি নিয়মিত যাতায়াতের এক পর্যায়ে আসামি শামীমা খান মজলিশের স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ২০০১ সালে আসামি সুবল কুমার রায় এবং শামীমা খান পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি ২০০৫ সালে জানাজানি হলে সুবল কুমার রায়কে মারধর এবং অপমান করা হলে তিনি বাসা থেকে চলে যান। তাকে আর ওই বাসায় যেতে নিষেধ করা হয়। ২০০৮ সালে সবল কুমার রায় বিয়ে করেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি আবার সেই বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।
যেদিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে সেদিন ভোরবেলা ফজরের নামাজের সময় ভিকটিম সেলিনা খান মজলিশ ছাদে উঠেছিলেন এবং সেখান থেকে দেখতে পান সুবল কুমার রায় চুপিচুপি তার বাড়ির দিকে আসছেন। সুবলকে দেখে তিনি চিৎকার করতে করতে নিচে নামছিলেন। তখন আসামি সুবল এবং শামীমা মায়ের চিৎকার থামাতে ওপরে যান। মাকে থামানোর জন্য মেয়ে শামীমা খান মজলিশ তাকে জাপটে ধরেন এবং পাশে থাকা একটি ফল কাটার চাকু দিয়ে গলার দুই পাশে তিনটি পোচ দেন। এরপর যখন তারা দেখেন তার মা মারা যায়নি জীবিত আছে তখন আসামি সুবল ইলেকট্রিক বোর্ড ভেঙে সেখান থেকে দুটি তার বের করে ভিকটিমের মাথায় ইলেকট্রিক শক দেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
পিবিআই প্রধান আরও বলেন, জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৪ জুন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। বাসার ডাইনিং রুমে ভিকটিমের গলার দুই পাশে ফল কাটার ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ভিকটিমকে তার প্রতিবন্ধী ছেলে সেতুর কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে খাটের চাদরের ওপরে একটি পুরাতন পত্রিকা বিছিয়ে ভিকটিমের মাথার কাছে দুটি বালিশ দিয়ে চাপা দিয়ে এবং ঘাড়ের নিচে তোষক দিয়ে শুইয়ে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আসামিরা।