রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নারী কেলেঙ্কারি, রেল সচিবের কাছে অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন
অভিযুক্ত মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা এবং ভুক্তভোগী নারী টুম্পা রাণী সরকার। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পশ্চিম) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদার নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা বর্তমানে টক অব দ্য রেলভবনে পরিণত হয়েছে। সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর টেবিলে একটাই আলাপ কুদরত-টুম্পার প্রেমের কাহিনী।
জানা গেছে, প্রায় ৫ বছর যাবত এই কর্মকর্তা পশ্চিমাঞ্চলে প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি রাজশাহীতে এবং তার পরিবারসহ সেখানেই থাকেন। তবে টুম্পা সরকারের অভিযোগের পর কুদরতকে রাজশাহী থেকে রেলভবনে পদায়ন করা হয়। এই কর্মকালীন সময়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মেডিকেল ডিপার্টমেন্টের হিন্দু ধর্মের কর্মচারী টুম্পা রাণী সরকারের সাথে তার প্রেমের ও শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর তিনি টুম্পাকে বিয়ের প্রলোভন দেখাতে থাকেন। যদিও কুদরত মুসলিম ও টুম্পা হিন্দু সম্প্রদায়ের।
টুম্পার ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩ বছরের অধিক সময় এই সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। তবে এই বিয়ের কোনো রেজিস্ট্রি করা হয়নি। নেই কোনো কাগজপত্র বা কাবিননামা। তারা নিজেরাই আকাশ, বাতাসকে সাক্ষী রেখে সিনেমার গল্পের মতো বিয়ে করেন।
তবে সম্প্রতি টুম্পা সরকারের সঙ্গে কুদরতের সম্পর্কের অবনতি হয়। এমনকি কুদরত-ই-খুদা টুম্পাকে নিজে স্ত্রীর মর্যাদা দিতেও অস্বীকৃতি জানান।
এদিকে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে টুম্পা সরকার রেলসচিব বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এর প্রেক্ষিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো: জালাল উদ্দিন এর নেতৃত্বে ১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি তাদের দুজনকে গত সপ্তাহে লিখিত বক্তব্য প্রদানের জন্য রেলভবনে হাজির হতে নির্দেশ দেয় এবং তারা দুজন রেলভবনে উপস্থিত হয়ে লিখিত বক্তব্য প্রদান করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টুম্পা রাণী সরকার তার বক্তব্যে কুদরতের সাথে ৩ বছরের অধিক সময় সম্পর্কের কথা জানায়। এই ৩ বছর তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সংসার করেন। কিন্তু ইদানীং কুদরত তাকে দূরে দূরে রাখেন এবং তার ভরণপোষণ ও দেন না। এতে টুম্পা রাণী তাকে তার অধিকারের কথা বললে কুদরত তাদের সম্পর্ক পুরোপুরি অস্বীকার করেন। এর ফলে উপায়ান্তর না দেখে তিনি রেলসচিবের নিকট স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে লিখিত অভিযোগ করেন। এসময় টুম্পা রাণী তাদের দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন ছবি তদন্ত কমিটির কাছে দেখিয়ে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন।এসময় কুদরত-ই-খুদা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে অস্বীকার করেন।
এদিকে, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালায় একজন কর্মচারীর নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ হল গুরুদণ্ড অপরাধ। এই অপরাধের দায়ে একজন কর্মকর্তার শাস্তি হল বাধ্যতামূলক অবসর, চাকুরি হতে অব্যাহতি, চাকুরি হতে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং সর্বনিম্ন গুরুদণ্ড অপরাধ হল নিম্নপদে বা নিম্ন গ্রেডে পদাবনতি এর যে কোন একটি ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, যুগ্মসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ ইতোমধ্যেই কুদরত ই খুদাকে দায়ী করে রিপোর্ট প্রদান করেছেন। রিপোর্ট এখন রেলসচিব ড: হুমায়ুন কবির এর টেবিলে। তবে অভিযুক্ত কুদরত রেলওয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন মহল থেকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বিষয়টা যাতে কোন ঝামেলা ছাড়াই শেষ করা যায় এজন্য রেলসচিবকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। রেলের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে রেলসচিব বিষয় টা কীভাবে নিষ্পত্তি করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কুদরত-ই-খুদার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার ব্যবহৃত অফিশিয়াল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।