বিদ্যুতের ভূতুড়ে বিল, গ্রাহকের গলা কাটছে প্রিপেইড মিটার!
বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার। ছবি: সংগৃহীত
বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ভোগান্তি লাঘব করার লক্ষে প্রিপেইড মিটার চালু করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-ডিপিডিসি। এই পদ্ধতিতে গ্রাহক আগাম মিটার রিচার্জ করে বিদ্যুৎ সেবা গ্রহণ করেন। তবে ভোগান্তি কমাতে গিয়ে এ যেন নতুন ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে গ্রাহক পর্যায়ে।
নতুন এই ব্যবস্থা নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ডিজিটাল এই মিটারে অস্বাভাবিক হারে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে বলেও অনেকে অভিযোগ তুলেছেন। সম্প্রতি এমনই একটি অভিযোগ করেন জেহাদ হোসেন চৌধুরি নামের একজন সাংবাদিক। তিনি তার ফেসবুকে প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জের এসএমএসসহ একটি পোস্ট করেন।
জেহাদ হোসেন চৌধুরি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘এইভাবে গরিবের গলা কাটা কতটা যৌক্তিক? ২২ এপ্রিল দুপুর পৌনে দুইটায় ৩ হাজার টাকার রিচার্জ করে মাত্র ৬ দিন না যেতেই ব্যালেন্স শেষ! এপ্রিল মাসে মাসে (মাত্র ২৮ দিনে) আমার ৬ হাজার টাকা সাবাড় করে দিয়েছে রাক্ষুসে প্রিপেইড মিটার।’
তার ওই পোস্টে বেশ কয়েকজন কমেন্ট করেছেন। যারা নিজেরাও এমন ভুক্তভোগী বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে জহিরুল হক সানি নামের একজন লিখেছেন, ‘আমার বাসায়ও সেইম অবস্থা। পরে বিদ্যুতের এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম মাসের শেষ দিকে বিদ্যুতের বিল একটু বেশি কাটে। প্রথম দিকে কম কাটে। মাসের প্রথম দিকে ৩ হাজার টাকায় যদি তিন দিন যায় তাহলে শেষ দিকে যাবে মাত্র একদিন। গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে এমনটাই হচ্ছে বলে ওই কর্মচারী জানিয়েছেন।’
এমডি ইসমাইল নামের একজন লিখেছেন, লুটেরা মাফিয়ার দল সাধারণ মানুষকে লুটে খাচ্ছে। এমন আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, ‘‘আমারও সেইম অবস্থা। এপ্রিলে মোট ছয় হাজার টাকা ভরেছি (রিচার্জ)। হয়তো কাল আবারও ভরতে (রিচার্জ) হবে। শফিকুল ইসলাম শাহীন লিখেছেন, ‘ভাই দেশে অরাজকতা চলছে। যার যে সুযোগ আছে কাজে লাগিয়ে দিচ্ছে।’
এমএইচ রবিন নামের একজন লিখেছেন, ‘স্মার্ট চোর। কার কাছে বিচার দিব। বিচার কে করবে? একটা মিটার কিনতে হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকায়। এটা অফিস থেকে সিস্টেমে অনুমোদন করে আনতে লাগে আরো আট-দশ হাজার। এরপর প্রতি মাসে বিল ঢুকানোর সময় বলে ‘মিটার রেন্ট’। আমার মিটার, আমাকেই আবার ভাড়া দিতে হয়। কি আজব! এমন অনেকেই ওই পোস্টের নিচে তাদের ক্ষোভের বিষয়টি তুলে ধরেন।’
এই বিষয়ে জেহাদ হোসেন চৌধুরি গণমাধ্যমকে জানান, তারা সব মিলে সংসারে লোক ৩ জন। সারাদিন একটি রুমে এসি চলে। আর রাত ৯ টার পর দুই রুমে এসি ও ফ্যান চলে। এর বাইরে অতিরিক্ত ফ্যান লাইটের তেমন ব্যবহার নেই। এতো কম বিদ্যুৎ পুড়িয়ে এতো টাকা বিল হওয়ার কথা নয়। এ ঘটনাকে তিনি চুরি বলেও অ্যাখ্যায়িত করেন।
এদিকে বিদ্যুতের ভূতুড়ে বিলের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে চলতি সংসদে নিজ বাড়িতে দ্বিগুণ তিনগুণ বিদ্যুৎ বিল আসার কথা জানান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল ইসলাম সুমন।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিল আদায়ে নিয়োজিত থাকা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হলে তারা গণমাধ্যমকে জানান, বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো বিদ্যুৎ বিল আদায়ে অতিরিক্ত কঠোরতা অবলম্বন করছে। তাদের প্রতি মাসে বকেয়া আদায়ের পাশাপাশি টার্গেট দেওয়া হচ্ছে। যার কারণে সরাসরি ব্যাংক, এজেন্ট ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং দোকান থেকে বিল সংগ্রহ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে এই ধরনের সংগ্রহের কোনো প্রয়োজন নেই। তাই সেখান থেকে টাকা কেটে নেওয়া খুব সহজ। মাস শেষে এটি কাটা হলে বিদ্যুৎ বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সহজ হয়ে যায়।