এখনো নিখোঁজ এমপি আনার, দুই ক্লু নিয়ে এগোচ্ছেন গোয়েন্দারা
ছবি: সংগৃহীত
ভারতে গিয়ে নিখোঁজের পাঁচ দিন পার হলেও এখনো সন্ধান মেলেনি ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ-সদস্য মো. আনোয়ারুল আজীম আনারের। এ নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা। উদ্বেগ বাড়ছে পরিবারে।
তাকে উদ্ধারে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ ও ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে কী ঘটেছে সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজীমের আনারের ভাগ্যে, এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি কেউ।
তিনি কোথায় কী অবস্থায় রয়েছেন, বেঁচে আছেন না কোনো বড় অঘটন ঘটেছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এ দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা।
এমপি আনারের স্বজনদের ধারণা, রাজনৈতিক বিরোধের জেরে নিখোঁজ হয়েছেন সংসদ-সদস্য আনার। প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে ভারতে কোনো অঘটন ঘটাতে পারেন এমন আশঙ্কা আনারের বড় ভাই এনামুল হক ইমানের।
মঙ্গলবার (২১ মে) বিকালে তিনি বলেন, আমরা গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আনার নিখোঁজের আগে ১৬ মে সকালে ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু মিন্টুর সঙ্গে তার (আনোয়ারুল আজীম) এতটাই বিরোধ যে তাকে ফোন করার কথা না।
এনামুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, যেহেতু ভারত থেকে মিন্টুকে ফোন করেছে, আমার মনে হচ্ছে ভাই বুঝতে পেরেছিল তার বিপদ হচ্ছে। হয়তো জানভিক্ষা চাওয়ার জন্য ফোনটা দিতে পারে।
বিরোধের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিন্টু পাঁচ বছরের জন্য মেয়র হওয়ার পর মামলা করে কৌশলে ভোট ছাড়াই ১২ বছর পার করেন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের বিদ্রোহের জেরে ২০২৩ সালে তার মেয়র পদ চলে যায়। নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দলের (আওয়ামী লীগ) সমর্থন না পাওয়ায় নির্বাচন করার সুযোগ পাননি মিন্টু। এ বিষয়ে আনারকে দোষারোপ করতেন মিন্টু। এ নিয়েই তাদের দ্বন্দ্ব ছিল।
এ অভিযোগের বিষয়ে ঝিনাইদহ পেরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিখোঁজ সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজীমের বিষয়ে সরকারি সব সংস্থা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, সংসদ-সদস্য আনার ভারতে যাওয়ার পর তার মোবাইল ফোন সিমের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান পাওয়া গেছে। তার অবস্থান কখনো মোজাফফরাবাদ, কখনো বেনাপোলের কাছাকাছি আবার কখনো কলকাতা দেখা গেছে। আসলে তিনি কোথায়, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সংসদ-সদস্যের পিএস আব্দুর রউফ বলেন, ভারত থেকে স্যার আমাকে সর্বশেষ ফোন করেন ১৬ মে সকাল ৭টা ৪৬ মিনিটে। কিন্তু আমি ধরতে পারিনি। এক মিনিট পরই কল ব্যাক করি। কিন্তু তিনি আর ধরেননি।
তিনি জানান, ১৫ বছর ধরে পিএস হিসাবে আছেন আব্দুর রউফ। এর আগেও একাধিকবার ভারতে গেছেন আনোয়ারুল আজীম। কিন্তু কখনোই পিএস আব্দুর রউফকে নিয়ে যেতেন না।
চিকিৎসা রাতে ১২ মে ভারত যান আনোয়ারুল আজীম আনার। কলকাতার ব্যারাকপুর সংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় পূর্বপরিচিত স্বর্ণ কারবারি গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। পরদিন ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফের সঙ্গে তার কথা হয়। ১৬ মে সকাল ৭টা ৪৬ মিনিটে সংসদ-সদস্য আনারের ফোন থেকে পিএসের নম্বরে সর্বশেষ কল আসে। কলটি ধরতে পারেননি পিএস। এক মিনিট পর পিএস তাকে কল করলে ওপাশ থেকে রিসিভ হয়নি। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি।