পানি নিয়ে জটিলতা সমাধানে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
ছবি: সংগৃহীত
দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রয়োজনীয় নদী তিস্তা। নদীটি বাংলাদেশ ও ভারতের তিন কোটির বেশি মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে দুই কোটির বেশি লোক বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে তিস্তার অববাহিকায় বসবাস করে। ৪০ লাখ লোক ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং প্রায় ৫০ লাখ লোক সিকিমের অববাহিকায় বসবাস করে। অর্থাৎ তিস্তার ওপর নির্ভরশীল ৭০ ভাগ লোক বাংলাদেশে তিস্তার অববাহিকায় বসবাস করে।
শুকনো মৌসুমে এ নদী শুকিয়ে হয় বিশাল চর। তিস্তা বিধৌত এই জনপদে প্রতিবছরই দুর্যোগ নেমে আসে। এখানেও খাবার ও কৃষিতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ে।
পানি প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় মিঠা পানির চাপ বেড়েছে ভূগর্ভের ওপর। কয়েক দশক ধরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের ৪০ শতাংশেরও বেশি ইউনিয়নে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে খাবার ও সেচের পানির।
রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় উঠে এসেছে, আন্তঃসীমান্ত নদীর মধ্যে পদ্মা ও তিস্তা অববাহিকা সবচেয়ে ঝুঁকিতে। মিঠা পানির অন্যতম এই উৎসে কমেছে প্রবাহ, বেড়েছে মরুকরণ। এর প্রভাবে সুন্দরবনে বাড়ছে লবণাক্ততা। এই দুই নদী অববাহিকায় ৪ কোটির বেশি মানুষ নিরাপদ খাবার পানি পাচ্ছে না।
দেশের পশ্চিমের উপকূলের নদ-নদীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত পদ্মা। অথচ প্রবাহ কমে যাওয়ায় গড়াই, কপোতাক্ষ নদীতে চর জমছে। রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা বলছে, ৫৭ আন্তঃসীমান্ত নদীর প্রায় সবগুলোই নাব্যতা সংকটে।
রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চের চেয়ারম্যান মোহম্মদ এজাজ বলেন, দেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৪ কোটি ২৯ লাখ মানুষজন পানি সম্পর্কিত নানা জটিলতায় আছেন। রাজশাহী থেকে শুরু করে জিকে প্রকল্প পর্যন্ত পুরোটাই মরুকরণ হয়ে যাচ্ছে। আবার সুন্দরবন থেকে শুরু করে বরিশাল, পুরো খুলনা অঞ্চল জুড়ে আমরা আরেকটি বড় স্যালাইনিটির মধ্যে পড়ছি।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জানান, নদীর পানি নিয়ে জটিলতা সমাধানে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘আমাদের পানি নিয়ে যে সমস্যা আছে, আগামী ৫ বছরের ভেতরে পাশের বন্ধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে হিস্যাগুলো নিতে চাই। মানুষ যাতে করে সুপেয় পানি পেতে পারে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাব।’
এছাড়াও ভূগর্ভের স্তর নীচে নেমে যাওয়া পানি সংকটে পার্বত্য এলাকা। অথচ এখানে নদী ও ভূগর্ভের পানি দিয়ে চাষ হয় তামাক। যা খাবার পানির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে জানান গবেষকরা।