জেব্রা হত্যার অভিযোগ
প্রত্যাহার হচ্ছেন সাফারি পার্কের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা
গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ১১ জেব্রার মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যা নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে এলাকার লোকজন বলছেন জেব্রাগুলোকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এ অভিযোগ ওঠার পর পরিবেশ বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে প্রথম নয়টি জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি রবিবার (৩০ জানুয়ারি) সাফারি পার্ক সরেজমিন ঘুরে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। এরমধ্য দিয়ে কমিটি তাদের তদন্তকাজ শুরু করেছে।
জেব্রা গুলোকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ ওঠার পর মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় যে বা যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে এবং হত্যার ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রবিবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গেলে সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন জেব্রাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। একইসঙ্গে মৃত্যুর খবর গোপন করা হয়েছে। তার অভিযোগ মূল্যবান এসব প্রাণীগুলোকে হত্যা করা হলেও সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ তা গোপন করে যাচ্ছেন।
তিনি তদন্ত কমিটির কাছে দাবি করেন সাফারি পার্কের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে রেখে তদন্ত কাজ যথাযথ হবে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভয়ে মুখ খুলবেন না। পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, সাফারি পার্কের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা এবং পার্কে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারী ও ঠিকাদারদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে জেব্রাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ১১টি জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। জেব্রাগুলো মারা যাওয়ার পর এর কারণ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) তদন্ত কমিটি গঠনের পর রবিবার (৩০ জানুয়ারি) তদন্ত কমিটি প্রথমবারের মত সাফারি পার্ক পরিদর্শনে যায়।
এদিকে সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবির ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তদন্ত কাজ করার জন্য সংসদ সদস্যের দাবির প্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো জানায়, ইতিমধ্যে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন সংশ্লিষ্টদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি দ্রুত কার্যকর করা কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে হত্যার ঘটনা তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, তদন্তে জেব্রা এবং বাঘ হত্যার ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে পার্কের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, জেব্রা মৃত্যুর মধ্যেই সাফারি পার্কে একটি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে এই বাঘকেও হত্যা করা হয়েছে
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জেব্রার মৃত্যু প্রতিরোধে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ দেশের বাইরে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে যে দেশ থেকে প্রাণীগুলো আমদানি করা হয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার খামার মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। রোগের বিস্তারিত লক্ষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল ইমেইল এর মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রেরণ করা হয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/