শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ | ৩০ কার্তিক ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ৯০৭ কোটি টাকার কারসাজি !

ছবি: সংগৃহীত

ভবঘুরেদের জন্য সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র বাড়াতে ভবন নির্মাণের নামে ৯০৭ কোটি টাকার প্রকল্প নিতে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। জানা যায়, জনবলের অভাবে ভবঘুরেদের জন্য সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে যথাযথ সেবা দিতে না পারলেও ভবন নির্মাণে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। খবর প্রথম আলোর ।

মন্ত্রনালয়ের নজর এড়াতে ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মাণে ৯০৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজকে ৮১টি ভাগে ভাগ করে অনুমোদন করাতে ‘তদবির’ করছে দপ্তরটি। যাতে এই প্রকল্পের কেনাকাটায় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন না লাগে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ’ শীর্ষক নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্মাণ ও পূর্ত কাজে ১০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে যেকোনো কেনাকাটার প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করতে হবে। এই কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী। এতে মোট ১৩ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী থাকেন। সচিব থাকেন ৯ জন।

সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা বলছে, সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, অনিয়ম রোধ করা, স্বজনপ্রীতি ঠেকানোসহ নজরদারি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাই সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাজ। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, মন্ত্রিসভা কমিটিকে এড়াতেই প্রকল্পটির কেনাকাটার ৮১টি প্যাকেজ করা হয়েছে।

সরকারি ক্রয়বিধির (পিপিআর) ১৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, ‘ক্রয়কারী উহার ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় কোনো নির্দিষ্ট ক্রয় পদ্ধতি বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা পরিহারের উদ্দেশে সাধারণত একটি প্রকল্প বা কর্মসূচির কোনো অংশ নিম্নতর মূল্যমানের একাধিক প্যাকেজে বিভক্ত করিবে না।’

অবশ্য ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনায় বাস্তবায়নের সুবিধার জন্য একাধিক প্যাকেজ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে ক্রয়বিধিতে। তবে সরকারি ক্রয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাঁচটি এলাকার ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য ৮১টি প্যাকেজ করা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।

সমাজসেবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ঘেঁটে দেখা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে কাজের ধরন প্রায় এক হলেও সেসব কাজ ছোট ছোট ৮১টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। কোনোটি ১০ কোটি, কোনোটি ২০ কোটি টাকার প্যাকেজ। সর্বোচ্চ একটি প্যাকেজে ধরা হয়েছে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা।

নথিপত্র বলছে, ৭৪টি প্যাকেজ ‘ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে প্রকল্প পরিচালককে রাখা হয়েছে। ছয়টি হোস্টেল ভবন নির্মাণসহ বাকি সাতটি প্যাকেজ অনুমোদনকারী হিসেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে রাখা হয়েছে।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের আসবাব কিনতে প্রায় তিন কোটি টাকা ও পুবাইলের জন্য প্রায় সাড়ে চার কোটি, ময়মনসিংহের জন্য তিন কোটি, নারায়ণগঞ্জের জন্য প্রায় চার কোটি, মিরপুরের জন্য দুই কোটি এবং মানিকগঞ্জের জন্য দুই কোটি টাকা আলাদা করে ব্যয় ধরা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, চাইলে আসবাব কেনার কাজ একসঙ্গে করা যেত।

একইভাবে বিছানাপত্র, ক্রীড়াসামগ্রী, যন্ত্রপাতি, বিদ্যুতের উপকেন্দ্র (সাবস্টেশন) নির্মাণ, লিফট, অস্থায়ী ছাউনি নির্মাণ ও একাডেমিক ব্লক স্থাপনে আলাদা করে প্যাকেজ করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে ছোট ছোট প্যাকেজে কাজ করার কৌশল বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, বিষয়টি তিনি খোঁজ নেবেন। এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেবেন।

সমাজসেবার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করাতেই নির্মাণকাজ গণপূর্ত অধিদপ্তরকে না দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তর ছোট ছোট ভাগে আগেও প্রকল্প নিয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের নামে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিকে (একনেক) এড়িয়ে নেওয়া এসব প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গত বছরের আগস্টে ছয়টি প্রকল্পে সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলোর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। আর কাজ পেয়েছে সরকারের প্রভাবশালীদের ‘খাতিরের’ ব্যক্তিদের সংস্থা। ওই সব প্রকল্প তখন ‘খাতিরের প্রকল্প’ নামে পরিচিতি পায়।

এদিকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, আশ্রয়কেন্দ্রে নতুন ভবন করা দরকার। তবে প্রকল্প নিতে হবে স্বচ্ছভাবে।

সাধারণত সরকারি ভবন নির্মাণের মতো পূর্তকাজ করে থাকে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তাদের সে বিষয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু সমাজসেবা ভবন নির্মাণ করাতে চাইছে তৃতীয় পক্ষ, অর্থাৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে। তারা কেন গণপূর্তকে বাদ দিয়ে ভবন নির্মাণের প্রকল্প নিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

সমাজসেবার প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কমিশন সূত্র বলছে, তদবির থাকলেও কমিশনের কোনো কোনো কর্মকর্তা এভাবে প্রকল্পটির অনুমোদন দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন।

সরকারি কেনাকাটার প্রস্তাব মূল্যায়নকারী সংস্থা সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) সাবেক মহাপরিচালক ফজলুল করীম বলেন, একই ধরনের কাজে আলাদা আলাদা প্যাকেজ করার অর্থ এখানে কোনো দুরভিসন্ধি আছে। পছন্দের কাউকে কাজ পাইয়ে দিতে এই কৌশল নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসা উচিত।

৯০৭ কোটি টাকার প্রকল্প

ভবঘুরে ও ভিক্ষায় নিয়োজিত মানুষদের সরকারি তত্ত্বাবধানে রেখে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য উপায়ে সমাজে পুনর্বাসিত করার চেষ্টাটি পুরোনো। এ জন্য ১৯৪৩ সালে করা হয় ভবঘুরে আইন। নতুন করে ২০১১ সালে সরকার ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন করে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন গাজীপুরে দুটি এবং নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও রাজধানীর মিরপুরে একটি করে দেশে মোট ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে চারটি নির্মাণ করা হয় ১৯৭৭ সালে। দুটি আরও আগে, ১৯৬১ সালে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ভবঘুরে, ছিন্নমূল মানুষ ও ভিক্ষুকদের আশ্রয় দেওয়া হয়। তবে ভবনগুলো জরাজীর্ণ।

এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ভবন নির্মাণে ‘বিদ্যমান ছয়টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে প্রথম পাঠানো হয় গত বছরের জুনে। তার পর থেকে প্রকল্পটি নিয়ে প্রক্রিয়াগত কাজ চলছে।

সেবা নেই আশ্রয়কেন্দ্রে

সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে ১ হাজার ৯০০টি আসন রয়েছে। এসব কেন্দ্রে আছেন ৯০৯ নিবাসী। মানে হলো, এখন যত আসন আছে, সেখানেই লোক থাকে না। পাশাপাশি জনবলের সংকট প্রকট।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, জনবলের সংকটের বিষয়টি তিনি জানেন। সেই কারণে নতুন প্রকল্প নেওয়ার পাশাপাশি জনবল নিয়োগের ওপর জোর দিচ্ছেন তাঁরা। তিনি আরও বলেন, মনে রাখতে হবে রাজস্ব খাতে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়াটা বেশ দীর্ঘ। ৪৫৮ জনবল নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা আছে, ভবঘুরে ব্যক্তিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রদান, ভরণপোষণ, শিক্ষা, বৃত্তিমূলক ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান, শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক উৎকর্ষ সাধন, কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মানসিকতার সংশোধন ও উন্নয়ন; স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, সমাজে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা—এসব তাদের লক্ষ্য।

এসব কাজ কেমন চলছে, তা জানতে ৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-১ নম্বরে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভবনের নিচতলায় চার বছরের একটি শিশুকে আশ্রয়কেন্দ্রের নিবাসী আরেক শিশু (৯) দুপুরের খাবার খাওয়াচ্ছে। যদিও শিশু দুটির মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। একটি শিশু বাক্‌প্রতিবন্ধী। তার পরিচর্যায় কোনো পরিচর্যাকর্মী দেখা গেল না।

জানা গেল, ৩ ফেব্রুয়ারি মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে বের হয়ে চার বছরের শিশুটি রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে হারিয়ে যায়। পুলিশ খোঁজাখুঁজি করে অভিভাবককে না পেয়ে তাকে মিরপুরে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে রাখে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিশুটিকে আজিমপুরে ছোটমণি নিবাসে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

৫ ফেব্রুয়ারি আশ্রয়কেন্দ্রের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেল, সেখানে বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৩০ জন একসঙ্গে খাবার খাচ্ছেন। সেখানে কোনো পরিচর্যাকর্মী নেই। একজনের শরীরে মারধরের চিহ্ন দেখা গেল। তাঁকে চিকিৎসক দেখানো হয়নি। সেখানে ভবঘুরেদের দেখাশোনায় ১০টি প্রহরীর পদ থাকলেও কোনো প্রহরী কর্মরত নেই। একজন চিকিৎসকের পদ থাকলেও সেটি খালি। প্রশিক্ষণ, কাউন্সেলিং—এসব দূরের কথা।

মিরপুরের আশ্রয়কেন্দ্রটিতে আসন আছে ২০০টি। নিবাসী রয়েছেন ৫৬ জন। কেন্দ্রের তথ্যমতে, ওই কেন্দ্রে অনুমোদিত পদ ৩০টি। এখন কর্মরত আছেন ১২ জন। তাই তাঁরা সেবা দিতে পারছেন না।

মিরপুর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক, পরিচর্যাকারী না থাকায় নিবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়। ১০ জন পরিচর্যাকারী চাওয়া হয়েছে। এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, শুধু মিরপুর নয়, সব সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রেই বেশির ভাগ পদ শূন্য।

‘ভাগ-বাঁটোয়ারার নকশা’

দেশের কিছু কিছু সরকারি সংস্থার তৈরি করা ভবন নির্মাণের পর ফেলে রাখা হয়েছে। কারণ, সেগুলো জনবল ও অন্যান্য কারণে ব্যবহার হচ্ছে না। যেমন মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রশিক্ষণের জন্য গত ছয় বছরে দেশের ১৪ জেলায় ১৫টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ভবন নির্মাণ করেছে সরকার। কিন্তু প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রশিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় ভবনগুলো খালি পড়ে আছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভবন করলে কর্মকর্তারা লাভবান হন। পণ্য ও উপকরণ কেনাকাটায় নানা ধরনের কমিশন বাণিজ্য হয়। ঠিকাদারের ব্যবসা হয়। সে কারণে ভবন নির্মাণেই আগ্রহ বেশি। সমাজসেবা ভবন নির্মাণের আগ্রহই শুধু দেখাচ্ছে না, প্রকল্প নিচ্ছে কৌশল করে।

সমাজসেবার নতুন প্রকল্পটির বিষয়ে জানিয়ে মতামত জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা স্পষ্ট যে প্রভাবশালী ব্যক্তি পারস্পরিক যোগসাজশ করে ভাগ-বাঁটোয়ারার নকশা করছে। দুর্নীতিপরায়ণরা নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছেন। তিনি বলেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতির কথা বলছে। কর্তৃপক্ষকে সমাজসেবার প্রকল্পটি নিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে।

 

সংবাদ সূত্র: প্রথম আলো

 

Header Ad

কৃতকর্মে নেই অনুশোচনা, ক্ষমতা হারানোকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ

শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর তিন মাস পরও নিজেদের কৃতকর্মের কোনো অনুশোচনা করছে না আওয়ামী লীগ। বরং দলটি এখনো পুরো ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন দমনে বলপ্রয়োগ এবং হতাহতের ঘটনায় দলটি এখনো দুঃখ প্রকাশ করেনি।

দলটির শীর্ষ নেতারা বিশ্বাস করেন যে গণঅভ্যুত্থানের আড়ালে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বর্তমানে সংগঠনকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। দলের কিছু নেতাকর্মী দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যদিও দলটির নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন।

গণঅভ্যুত্থানের তিন মাস পর নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা করতে প্রথম আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু, বিদেশে আত্মগোপনে থেকে দলীয় নেতাদের বাংলাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা করার বিষয়টি নিয়ে দলের তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা অভিযোগ করছেন, এতে দেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীরা আরও বিপদের মুখে পড়ছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে ক্ষমা না চাইলে মাঠে ফিরে আসা তাদের জন্য কঠিন হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সহিংস পরিস্থিতির পর শেখ হাসিনা আন্দোলনটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ক্ষমতা হারানোর পরও দলটির নেতারা একই কথা বলে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দাবি করেন, “গণঅভ্যুত্থান ছিল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এর পেছনে একটি বিদেশি শক্তির হাত ছিল।” তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগ মনে করে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করার পেছনে বিদেশি শক্তির ভূমিকা ছিল।

আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলি ও বলপ্রয়োগে প্রায় সাড়ে আটশ’রও বেশি মানুষ নিহত ও ২০ হাজারেরও বেশি আহত হন। এই বিষয়ে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি যে আন্দোলনে একটি তৃতীয় পক্ষের হাত ছিল।”

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহারে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে দলটির কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের সম্পত্তিতে হামলার ঘটনা ঘটে। জীবন রক্ষার্থে আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। শেখ হাসিনা ও অন্যান্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে।

সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “নেত্রীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে।” সূত্র: বিবিসি বাংলা

Header Ad

হালাল অর্থনীতির বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ইন্দোনেশিয়ার

ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। ফলে হালাল অর্থনীতির উন্নয়নের মাধ্যমে দেশটির জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সরকার এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ‘দ্য ২০২৩-২০২৯ হালাল ইন্ডাস্ট্রি রোডম্যাপ’ নামের এই পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে নানামুখী উদ্যোগও গ্রহণ করেছে দেশটি।

যেমন- হালাল পণ্যের সংজ্ঞা নির্ধারণ, হালাল সার্টিফিকেটের বাধ্যবাধকতা আরোপ এবং ‘দ্য ন্যাশনাল কমিটি ফর শরিয়া ফাইন্যান্স’ গঠন ইত্যাদি। হালাল পণ্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, তা এমন পণ্য, যার উৎপাদনে ইসলামী আইন অনুসরণ করা হয়। যার লক্ষ্য হবে দেশ ও বিদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী।

ইন্দোনেশিয়ান সরকার হালাল শিল্পকে দুই ভাগে ভাগ করেছে : ক. মৌলিক হালাল শিল্প, খ. উন্নয়নশীল হালাল শিল্প।
মৌলিক হালাল শিল্পের অধীনে আছে খাদ্য ও ভোগ্য পণ্য, ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী, প্রসাধনী ও সেবা। আর উন্নয়নশীল শিল্পের অধীনে মুসলিম ফ্যাশন, মুসলিমবান্ধব পর্যটন ও সৃজনশীল ইসলামী অর্থনীতি। রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ইন্দোনেশিয়া চারটি লক্ষ্য সামনে রেখেছে : ১. হালাল পণ্যের উৎপাদন ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করা, ২. নীতি ও প্রবিধান বাস্তবায়ন ও শক্তিশালী করা, ৩. অর্থায়ন বৃদ্ধি ও অবকাঠামোর উন্নয়ন, ৪. জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে হালাল ব্র্যান্ডিং সৃষ্টি করা।

ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে ২০২৩ সালে হালাল শিল্পের টার্নওভার ৩৬ ট্রিলিয়ন আরপি। প্রতিবছর জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে (জিডিপি) হালাল শিল্পের অবদান ৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইন্দোনেশিয়ার সরকার একে ২.২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলালে উন্নীত করতে চায়। সূত্র : দ্য ইনভেস্টর ডটভিএন।

Header Ad

আজীবন ফ্রি চিকিৎসাসেবা পাবেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের আজীবন ফ্রি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ইউনিক আইডি কার্ড দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী দায়িত্ব পাওয়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান।

তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এছাড়া আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে লিখিত রূপরেখা দেওয়া হবে। রূপরেখায় দেওয়া টাইমলাইন অনুযায়ী সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আহতদের সঙ্গে ছয় উপদেষ্টার বৈঠক শেষে এসব কথা জানান তিনি। অন্তত ৮০ জন আহতের সঙ্গে বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলা এ বৈঠক।

এ সময় ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম, আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধ’র জমজ ভাই ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ অংশ নেন।

বৈঠক শেষে ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, আহত যোদ্ধাদের ইউনিক আইডি কার্ড থাকবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তারা সারা জীবন বিনামূল্যে সেবা পাবেন। যেসব বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সরকারি চুক্তি থাকবে সেখানেও বিনামূল্যে সেবা পাবেন তারা। ১৭ নভেম্বরের পর সাপোর্ট সেন্টার থাকবে। সেখান থেকে সব ধরনের সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। আহতদের চিকিৎসায় সব সরকারি হাসপাতালে বেড ডেডিকেটেড থাকবে। ঢাকার সব হাসপাতালকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এ বিষয়ে গাফিলতি কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

কৃতকর্মে নেই অনুশোচনা, ক্ষমতা হারানোকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ
হালাল অর্থনীতির বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ইন্দোনেশিয়ার
আজীবন ফ্রি চিকিৎসাসেবা পাবেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা
টাঙ্গাইলে যুবলীগ নেতাসহ ৩ জন গ্রেফতার
এক কর্মস্থলে ৩ বছর হলেই বদলি, পরিপত্র জারি
৩১ দফা নিয়ে নওগাঁয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের মতবিনিময়
বাংলাদেশের চারদিকে কোনো বন্ধু রাষ্ট্র নেই: আসিফ নজরুল
দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের নামে ৩ স্টেডিয়ামের নামকরণ
শিল্পপতিকে হত্যার পর ৭ টুকরো করে লেকে ফেলে দেন পরকীয়া প্রেমিকা
ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহর মৃত্যু
আগামীতে আওয়ামী লীগের মতো পরিবারতন্ত্র থাকবে না: তারেক রহমান
বঙ্গবন্ধু নাম পাল্টে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় লেখা সাইনবোর্ড টানালেন শিক্ষার্থীরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা বাতিল
মাউশির ৮ আঞ্চলিক কার্যালয়ে নতুন উপ-পরিচালক
ঢাবিতে ছাত্রদলের ২৪২ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ভারতে বসে শেখ হাসিনার মোবাইল ব্যবহার ও বিবৃতি নিয়ে ঢাকার অসন্তোষ
গাইবান্ধায় বড় ভাইকে হত্যার দায়ে ছোট ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক
উদ্বোধন হলো বেনাপোলের কার্গো ইয়ার্ড টার্মিনাল: বাড়বে বাণিজ্য, কমবে যানজট