এবারের মন্ত্রিসভায় প্রবীণতম আবদুস সালাম, কনিষ্ঠতম মহিবুল হাসান
আবদুস সালাম ও মহিবুল হাসান চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে ৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা। বরাবরের মতো এবারের মন্ত্রিসভায়ও প্রধান্য দেওয়া হয়েছে প্রবীণদের।
নতুন মন্ত্রিসভার গড় বয়স প্রায় ৬৬ বছর; যেখানে অভিজ্ঞদের ভীড়ে সবচেয়ে তরুণ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আগের বার একই মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মন্ত্রিসভায় প্রবীণতম সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছেন তার চেয়ে দ্বিগুণ বয়সী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম। ৮২ বছর বয়সে প্রথমবার মন্ত্রিসভায় ডাক পেয়েই দায়িত্ব পেয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে মন্ত্রীদের বয়সের এই হিসাব বের করা হয়েছে। বিদায়ী মন্ত্রিসভার সদস্যদের গড় বয়স ছিল ৬০ বছর। অর্থাৎ, গতবারের চেয়ে আরও অভিজ্ঞ ও প্রবীণদের নিয়ে গঠিত হয়েছে এবারের মন্ত্রিসভা।
এবারের মন্ত্রিসভায় ৮০ বছরের বেশি বয়সী সদস্য আছেন আরও একজন। তিনি আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ৮১ বছর বয়সী এই রাজনীতিক এবার দায়িত্ব নিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তার আগে ভার সামলেছেন ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়ের। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় জ্যেষ্ঠ সদস্য ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি এবার মন্ত্রিসভায় ২৬ জন পূর্ণমন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী আছেন, যেখানে ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সী সদস্য ১৫ জন। এ তালিকায় আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (৭৭), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক (৭৭), সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (৭৪), শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (৭৩), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৩), বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান (৭২), খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার (৭৩), ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (৭৯), বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক (৭০), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমান (৭০), কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ (৭৬), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান (৭৭), স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন (৭৫), রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম (৭০) এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক (৭৩)।
মন্ত্রিসভায় ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী সদস্য ১১ জন। তারা হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (৬৮), স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম (৬৮), পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ (৬০), ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান (৬৮), গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (৬৯), যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান (৬২), পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী (৬২), মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি (৬২), পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (৬০), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান (৬৭) এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী (৬৬)।
এরপর ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী সদস্য পাঁচজন। তারা হলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি (৫৮), জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন (৫১), বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (৫৯), নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (৫৪) এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (৫৪)।
আর ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী সদস্য চারজন, যাদের মধ্যে পূর্ণমন্ত্রী কেবল শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ( ৪১)। এছাড়া আছেন টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক (৪৩), তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত (৪৬) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী (৪৮)।
এবারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নারী সদস্য আছেন চারজন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্যরা হলেন দীপু মনি, সিমিন হোসেন রিমি ও রুমানা আলী। সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সামন্ত লাল সেন ও কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
মন্ত্রিসভায় যুব নেতৃত্বের কম উপস্থিতির দিকটি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। সেখানে যুব নেতৃত্ব আরও আসতে পারত। প্রতিনিধিত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বয়স কাঠামোর বণ্টন দেখা যায় না। এটা শুধু মন্ত্রিসভাতেই না, রাজনৈতিক দলগুলোতেও একই অবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ পদে যুব প্রতিনিধি এখনো বেশ কম। প্রবীণ ব্যক্তিরা নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ হলেও বর্তমান এই সময়ে যুবাদের প্রয়োজন ও চাহিদা বোঝার ক্ষেত্রে তাদের ঘাটতি থাকতে পারে।