কারা আসছেন নতুন মন্ত্রিসভায়
ফাইল ছবি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর সকলের দৃষ্টি এখন নতুন মন্ত্রিসভার দিকে। কেমন হবে মন্ত্রিসভার আকার, কারা থাকছেন, কারা বাদ যাচ্ছেন বা নতুন কারা আসছেন। সচিবালয় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, ব্যবসা-বাণিজ্যের অঙ্গনে এটিই এখন মুখ্য আলোচনার বিষয়।
এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২৯৯ আসনের মধ্যে ২২২ আসনে দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে আজ বুধবার সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। এবারের মন্ত্রিসভায় তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে মন্ত্রিসভায় চমক নিয়ে আসছেন সংসদীয় দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এ মন্ত্রিসভায় তরুণদের পাশাপাশি পুরোনো মন্ত্রীরাও থাকছেন। এতে সম্ভাবনার দোলাচলে রয়েছেন অনেক মন্ত্রী ও নবনির্বাচিত এমপি।
এদিকে বর্তমান মন্ত্রীদের বেশিরভাগই আরেক মেয়াদের জন্য বহাল থাকবেন বলে আভাস মিলেছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে অর্থ ও পররাষ্ট্রে নতুন মন্ত্রী আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী দেওয়া হবে। এটা অনেকটা নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে এ কে আব্দুল মোমেনকে অন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে। তবে শেষ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। বর্তমান মেয়াদে মন্ত্রণালয়ে ঠিকমতো ‘অফিস না করা’ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই। এ নিয়ে সচিবালয় ও গণভবনসহ সব জায়গায় তার বাদ পড়ার গুঞ্জন চাউর হয়েছে।
আসছেন চার আমলা: প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়া সাবেক দুই আমলা আবুল কালাম আজাদ, ড. মোহাম্মদ সাদিক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সচিব সাজ্জাদুল হাসান এবং সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন বলে আভাস মিলেছে। আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব। ড. সাদিক সরকারের শিক্ষা সচিব ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ছিলেন। পরে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন সাদিক। সাজ্জাদুল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব। সৌরেন্দ্র নাথ পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব। জনপ্রশাসনে থেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা এই চারজনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে তাদের মন্ত্রিসভায় রাখতে চান শেখ হাসিনা।
আরও নতুন যারা: প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবের হোসেন চৌধুরী এবার মন্ত্রিসভায় ঢুকতে পারেন। সূত্র জানায়, আগে কোনো মন্ত্রী পায়নি—এমন জেলা থেকে এবার মন্ত্রী করবে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে কক্সবাজার-৩ থেকে সাইমুম সরওয়ার কমল অথবা কক্সবাজার-২ থেকে আশেক উল্লাহ রফিককে মন্ত্রিসভায় রাখা হতে পারে। ফেনী-১ থেকে নির্বাচিত আলাউদ্দিন আহমদ চৌধুরী নাসিম এবং নড়াইল-২ থেকে নির্বাচিত জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, মাহমুদ হাসান রিপন, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ড. সেলিম মাহমুদ, বাহাউদ্দিন নাছিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, আব্দুর রহমান, মাহবুবউল-আলম হানিফ, নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে পারেন।
সংখ্যালঘু থেকে তিনজন: জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও পার্বত্য তিন জেলা থেকে একজন মন্ত্রিসভায় থাকবেন। যিনি মন্ত্রী হবেন, তার হাতেই থাকবে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত দুজন এমপির গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের একজন সাবেক সিনিয়র সচিব নওগাঁ-৩ থেকে নির্বাচিত সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। তবে তারা কে কোন মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ধারণা করা হচ্ছে, একজনকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হতে পারে।
পুরোনো যারা থাকছেন: বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম নতুন মন্ত্রিসভায়ও থাকছেন। তাদের মন্ত্রণালয় পরিবর্তনের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন। তাদের কে কোন মন্ত্রণালয় পাবেন, তা জানা সম্ভব হয়নি। পদোন্নতি পেতে পারেন নসরুল হামিদ বিপু ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
বাদ পড়তে পারেন যারা: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বাদ পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
স্বতন্ত্র ও শরিকদের স্থান নেই: স্বতন্ত্র এমপিদের অনেকেই নিজেদের আওয়ামী লীগ দাবি করে দলে ভিড়ে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার চেষ্টা করলেও সে সুযোগ তারা পাচ্ছেন না। তাদের দলীয় এমপি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ সভাপতি। ফলে স্বতন্ত্র এমপিদের কাউকে মন্ত্রী করা হচ্ছে না- এটা অনেকটাই নিশ্চিত। ১৪ দলের শরিক থেকে জয়ী দুজনেরও মন্ত্রিসভায় জায়গা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। বর্তমান মন্ত্রিসভায়ও শরিকদের কাউকে রাখেননি শেখ হাসিনা।
গেজেট ও শপথ: সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিতদের তালিকা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর নতুন সংসদ সদস্যদের শপথের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্পিকারের কাছে সেই তালিকা পাঠানো হয়। গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই অনুযায়ী আজ বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যরা শপথ নেবেন। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে ডাকতে হবে সংসদ অধিবেশন। নিয়ম অনুযায়ী, সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে অবহিত না করলে বা শপথ না নিলে সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে।
এবারের মন্ত্রিসভা কেমন হতে পারে, জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনেক জ্ঞানী মানুষ। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা উনার ঠিক করা আছে। এটা উনি জানেন, কোথায় কাকে কখন নেওয়া দরকার। এটা প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঠিক করেন। সারা পৃথিবীতেও এটিই নিয়ম।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভা গঠন হবে। এ মন্ত্রিসভা নতুন-পুরোনো মুখ নিয়ে হওয়ার কথা। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি ক্ষেত্রেই চমক নিয়ে আসেন। আশা করি নতুন মন্ত্রিসভায়ও চমক নিয়ে আসবেন। তিনি যাকে ভালো মনে করবেন, তাকেই মন্ত্রিসভায় স্থান দেবেন।