নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের চিন্তার কারণ এখন দুদক
ছবি সংগৃহীত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে দুদিন আগেই। এবারের নির্বাচনে এক হাজার ৯৭১ প্রার্থীর লড়াইয়ে ইতোমধ্যে জানা হয়ে গেছে ২৯৮ জয়ীর নাম। কয়েকদিনের মধ্যে নতুন সংসদ গঠন হতে যাচ্ছে তাদের নিয়ে। কিন্তু নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের উৎসবের মেজাজে চিন্তা ধরিয়ে দিচ্ছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কারণ সংস্থাটি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদ বিবরণী খতিয়ে দেখতে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে মিথ্যা তথ্যের প্রমাণ মিললে হারাতে হতে পারে সংসদে বসার যোগ্যতাও। এরই মধ্যে হলফনামায় অস্বাভাবিক সম্পদের উল্লেখ আছে, এমন শতাধিক প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেছে দুদক। যেখানে বিজয়ী প্রার্থীদের পাশাপাশি আছেন পরাজিত প্রার্থীরাও।
দুদক সূত্র জানায়, প্রার্থীদের রহস্যজনকভাবে সম্পদ বৃদ্ধির তথ্য অনুসন্ধান করা হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, অনেকেরই সম্পদ বেড়েছে ১০ থেকে ১০০ গুণ পর্যন্ত। এটি অস্বাভাবিক। অনুসন্ধানকালে তাদের সম্পদ বৃদ্ধির উৎস জানতে চাওয়া হবে। এর আগেও দুদক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার সম্পদ অনুসন্ধান করেছে। ওই সময় অনুসন্ধান শেষে যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছিল।
অনুসন্ধান প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন জানান, কারও সম্পদ অনুসন্ধান করা দুদকের চলমান বিষয়। কারও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান করা হয় কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। হলফনামার সম্পদের বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই, অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, প্রার্থীরা হলফনামায় স্থাবর, নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার, ব্যবসা, শিল্প-প্রতিষ্ঠান, কৃষি খাত, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, জমি, প্লট, গাড়ি, বাড়িসহ বিভিন্ন অস্থাবর সম্পদের উল্লেখ করেছেন। ওইসব সম্পদ সংশ্লিষ্টরা কীভাবে অর্জন করেছেন, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে তাদের কাছ থেকে। অনুসন্ধানে দেশে-বিদেশে কেউ সম্পদ গোপন করে থাকলে তাও খুঁজে বের করা হবে। অনুসন্ধানে যাদের সম্পদ বৈধভাবে অর্জিত বলে প্রমাণিত হবে, তাদের অব্যাহতি দেওয়া হবে। আর যাদের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জিত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
নির্বাচিত এমপি ও পরাজিতদের হলফনামার সম্পদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তাদের পোষ্যদের সম্পদের হিসাবও নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। হলফনামার সম্পদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের আয়কর নথিও যাচাই করা হবে। হলফনামা ও আয়কর নথির তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। তাদের ব্যাংক হিসাবও যাচাই করা হবে। কেউ হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন কিনা, তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
আইন অনুযায়ী, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ও তার পরিবারের সদস্যদের আয়ের উৎস হিসেবে কৃষি, ব্যবসা, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান, শেয়ার সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত, পেশা ও অন্যান্য তথ্য উল্লেখ করতে হয়।
নিজের ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমানো অর্থ, বন্ড, ঋণপত্র, শেয়ার, পোস্টাল, সঞ্চয়পত্র, বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, স্বর্ণ, মূল্যবান ধাতু ও পাথরে নির্মিত অলংকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র ও অন্যান্য সম্পদ উল্লেখ করতে হয়।
স্থাবর সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করতে হয় কৃষি, অকৃষিজমি, আবাসিক ও বাণিজ্যিক পাকা ভবন, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, চা বাগান, রাবার বাগান, মৎস্য খামারসহ অন্যান্য সম্পদের তথ্য।
নিজে ও পরিবারের সদস্যরা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান, পরিচালক অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকলে সেটাও উল্লেখ করতে হয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের তথ্য ও বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব উল্লেখ করতে হয়।
বিধি অনুযায়ী প্রতিটি হলফনামা এফিডেভিট, নোটারি পাবলিক ও ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা প্রত্যয়ন করতে হয়। প্রথমবার ঘোষণা দেওয়া তথ্য পরিবর্তন করা যায় না; কোনোরূপ ঘষামাজাও করা যায় না। হলফনামায় কোনোভাবেই অসত্য তথ্য উল্লেখ করা যায় না।
প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে এক হাজার ৯৭১ প্রার্থীর লড়াইয়ে ইতোমধ্যে জানা হয়ে গেছে ২৯৮ জয়ীর নাম। আজ মঙ্গলবার সকালে বর্তমান সংসদের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শপথ বাক্য পাঠ করাবেন।