মোবাইলে কলরেট ও ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম যেখানে কমিয়ে আনার দাবি দীর্ঘদিনের, সেখানে আবারও বাড়তে যাচ্ছে গ্রাহকের খরচ। মুঠোফোন গ্রাহকদের সেবার ওপর আরও শতাংশ অতিরিক্ত সম্পূরক কর আরোপ করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। শিগগিরই এ নিয়ে জারি করা হতে পারে নতুন প্রজ্ঞাপন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র বলছে, মোবাইল ফোন সেবায় বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের সঙ্গে আরও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সংযোজনের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। অনুমোদন মিলেছে দুটি মন্ত্রণালয় থেকেও। এখন শুধু অপেক্ষা প্রজ্ঞাপন জারির।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইলে ১০০ টাকার রিচার্জ করলে গ্রাহকদেরকে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ দিতে হয় ২৮ টাকা ১০ পয়সা। রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স দিতে হয় ৬ টাকা ১০ পয়সা, আর পরোক্ষ কর দিতে হয় আরও ২০ টাকা ৪০ পয়সা। অর্থাৎ, গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে কর বাবদ তার থেকে কাটা পড়ে ৫৪ টাকা ৬০ পয়সা।
এ অবস্থায় সম্পূরক শুল্ক আরও ৩ শতাংশ বাড়ানো হলে গ্রাহকদের রিচার্জ বাবদ কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ বাবদ কাটা যাবে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ। রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স বাবদ কাটা যাবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং পরোক্ষ কর বাবদ কাটা যাবে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ, গ্রাহক তার মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে তাকে কর দিতে হবে ৫৬ টাকা ৩০ পয়সা। ফলে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জে ব্যবহার করতে পারবেন মূলত মাত্র ৪৩ টাকা ৭০ পয়সা।
মোবাইল ফোন সেবায় দফায় দফায় খরচ বাড়ায় কমে যাচ্ছে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক। ডাটা ব্যবহারের খরচে কাটছাঁট করছেন অনেকেই। ফলে, যোগাযোগপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার বদলে উল্টোপথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে দেশের মানুষ।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সবশেষ তথ্যানুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে মুঠোফোনের গ্রাহক ছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ, যা গত জুনের চেয়ে ৭৩ লাখ কম। অন্যদিকে জুনের চেয়ে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ৯৭ লাখ কমে ১৩ কোটি ২৮ লাখে নেমেছে।
মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ইন্টারনেট পরিষেবায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা তলানিতে আছি। কিন্তু ভ্যাটের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে। যেখানে দেশের ৪৮ শতাংশ মানুষ এখনো ইন্টারনেট সেবার বাইরে, সেখানে নতুন করে উচ্চহারে করারোপ নাগরিকদের ইন্টারনেট সেবা বিমুখ করবে; নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করবে।