ডিসি-এসপিদেরও নজরদারীতে রাখছে ইসি
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশে ৩ জেলা প্রশাসক (ডিসি), ২ বিভাগীয় কমিশনার ও ৫ এসপি পদে পরিবর্তন এনেঠে সরকার। দেশজুড়ে আরও ডিসি-এসপিদের নিয়ে স্বপ্রণোদিতভাবে তদন্তে নেমেছে ইসি। এর পাশাপাশি তাদের নজরদারিতেও রাখা হচ্ছে বলে জানা যায়। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর একাধিক প্রার্থী ডিসি-এসপিদের নামে অভিযোগ আছে। এসব অভিযোগও আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে ইসি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসির তদন্তে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় এসপি-ডিসি কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করছেন, তবে তাকে বদলি করা হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাঠে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে, ডিসি-এসপিদের এমন কোনো আচরণ দেখা গেলে দ্রুত সময়ে বদলি করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত বিষয়টি চলমান রাখতে চায় ইসি।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ডিসি-এসপিদের বদলি এখন নতুন কিছু না, এটা চলমান প্রক্রিয়া। কমিশনের চোখে নিরপেক্ষ না হলে বা কোনো প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে কাজ করলেই প্রত্যাহার করা হবে। কোনো ডিসি-এসপির বিপক্ষে কোনো প্রার্থী অভিযোগ করলে আমরা সেটা অবশ্যই তদন্ত করবো। তদন্তে যদি প্রমাণ হয় ওই ডিসি-এসপি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন, তাহলে বদলি করা হবে। তদন্তে প্রমাণ হলেই আমরা ব্যবস্থা নেবো।
ইসি জানায়, যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় কুমার জোয়ারদারের বদলির দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে লিখিত আবেদন করেছেন মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। এ বিষয়ে তদন্ত করছে ইসি। এমন একাধিক এসপির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হয়েছে। তাদের বিষয়েও তদন্তে নেমেছে ইসি। মাঠপ্রশাসন ও পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই অংশ হিসেবে দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) পর্যায়ক্রমে বদলি করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পৃথক চিঠি দেয় কমিশন।
ইসি সূত্র থেকে জানা যায়, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান জেলায় জেলায় গিয়ে মাঠপ্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে ইউএনও এবং থানার ওসিদেরও ডাকা হয়েছে। চার কমিশনার জেলায় জেলায় সফরে গিয়ে মাঠপ্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষপাতের অভিযোগ পান। বিষয়টি নিয়ে কমিশনে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেন তারা। সেখানে বড় ধরনের রদবদলের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।
এরই মধ্যে বরিশাল ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ৫ এসপি, ৩ ওসি ও ১ জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রবিবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে ইসির উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান এ সংক্রান্ত নির্দেশনার আলাদা আলাদা চিঠি জননিরাপত্তা বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে দুই পুলিশ কমিশনারসহ হবিগঞ্জ, পিরোজপুর, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরের এসপিকে প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক এবং মানিকগঞ্জ সদর, সিংগাইর ও শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও (ওসি) প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাদের স্থলে উপযুক্ত কর্মকর্তাকে পদায়ন করার জন্য বলেছে ইসি।
ইসির কর্মকর্তা বলেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৪৪ (ঙ) ধারায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকারি কর্মকর্তাদের বদলির এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত হয়। ওই ধারা অনুযায়ী, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের কোনো বিভাগ বা কোনো সংস্থার যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়ার ক্ষমাত রাখে ইসি। নির্দেশনা পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করা ওই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চার কমিশনার মাঠপর্যায়ে সফরকালে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পেয়েছেন। ওই তালিকায় জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপাররাও রয়েছেন। তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। তবে তাদের নামের তালিকা পাওয়া যায়নি। এছাড়া নির্বাচনে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বদলি এবং শাস্তির মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ প্রক্রিয়াটি চলমান থাকবে।