বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্মদিন আজ
ছবি সংগৃহিত
বাংলাদেশ রেলওয়ের ১৬১তম জন্মদিন আজ। রেল ভ্রমণ আরামদায়ক এবং উপভোগ্য হওয়ায় যাতায়াতের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম ট্রেন। ইংল্যান্ডে ১৮২৫ সালে রেলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশে রেলযাত্রা শুরু হতে আরও সময় লেগেছিল ১৯ বছর। ১৮৪৪ সালে পশ্চিম বাংলার হাওড়া থেকে রানীগঞ্জ শহর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ শুরু করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি।
রেলগাড়ির ‘ঝমাঝম’ শব্দ এই বাংলার মানুষ শুনেছিল আরও পরে। বাংলায় প্রথম রেল চালু হয়েছিল ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর। দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার রেললাইন উদ্বোধনের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। আর এজন্যই কুষ্টিয়ার ‘জগতি’ হলো বাংলাদেশের প্রথম রেলস্টেশন।
সবচেয়ে প্রাচীন যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে টিকে থাকা রেলগাড়ির বিবর্তনের ইতিহাস বেশ রোমাঞ্চকর। ধীরে ধীরে আধুনিকায়ন হয়েছে রেলগাড়ির। রেলগাড়ি অনেকের কাছে ট্রেন নামেই বেশি পরিচিত।
ট্রেন শব্দটি এসেছে প্রাচীন ফরাসি শব্দ ‘ট্রাহিনার’ থেকে। শুরুর দিকে ঘোড়ায় টানা হতো ট্রেন। পরবর্তী সময়ে ইঞ্জিনের ব্যবহার শুরু হয়। পরে রেললাইন স্থাপন করার মাধ্যমে রেলগাড়ি বর্তমান রূপ পায়।
ঊনবিংশ শতকের প্রথম থেকে প্রায় সব ধরনের রেলগাড়ি চলতো বাষ্পীয় ইঞ্জিনে। ১৯২০ সালের প্রথম ভাগ থেকে শুরু হয় ডিজেল ইঞ্জিন ও বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনের ব্যবহার। ১৯৭০-এর দশক নাগাদ প্রায় সব দেশেই বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ব্যবহার উঠে যায়।
তবে সস্তা কয়লা ও জনশক্তির দেশ যেমন, চীনে এখনও বাষ্পীয় রেল ইঞ্জিনের ব্যবহার আছে। স্থল পরিবহনের অপরিহার্য মাধ্যম হিসেবে উপমহাদেশে রেলওয়ের প্রবর্তন এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর সম্প্রসারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ আর্থসামাজিক বিবর্তনের জন্য রেলওয়ে এক মাইলফলক। রেল একটি আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা।
এর লাইনগুলো সাধারণত মসৃণ; যে কারণে যাতায়াতে ঝাঁকি কম লাগে। একটি স্টেশনে এসে নির্ধারিত সময় অপেক্ষা করে যাত্রী ও মালামাল ওঠানামা করার জন্য। যে কারণে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, শিশু, নারীসহ সর্বস্তরের মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে। কালের পরিক্রমায় ব্রিটিশ শাসনামলের ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ইস্ট পাকিস্তান রেলওয়ে এবং অবশেষে বাংলাদেশ রেলওয়েতে পরিণত হয়েছে।
রেলওয়ে বোর্ড ভেঙে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আওতায় রেলওয়ে বিভাগ ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়েকে পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রাম) ও পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী) দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ভেঙে পৃথক রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়।
বর্তমান বিশ্বে একমাত্র শাটল ট্রেন সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমান পৃথিবীর আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সার্ভিস নেই। আগে একটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো ইউনিভার্সিটিতে। তবে এখন সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে মানুষ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত নিজেকে পেছনে ফেলার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে সবাই। সময়কে পেছনে ফেলতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অসাধারণ সমন্বয়ে এসেছে নিত্যনতুন দ্রুতগামী ট্রেন। যত দিন যাচ্ছে, আরও উন্নত হচ্ছে এসব ট্রেন। দ্রুতগামী ট্রেন আবিষ্কারে এগিয়ে আছে জাপান ও চীন। ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার গতির সর্বাধুনিক ট্রেন, ভূগর্ভস্থ ট্রেন, পাতাল লাইন, মেট্রো ট্রেনের পর এখন আকাক্সক্ষা টিউব ট্রেনের। বায়ুশূন্য টিউবের ভেতর দিয়ে দ্রুতগতির এই ট্রেন তাদের হাতছানি দিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে ট্রেন চলছে ধুঁকে ধুঁকে, ঢিমেতালে, ঢিলেঢালায়। লাভজনক এ সরকারি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকে লোকসান গুনতে গুনতে বর্তমানে ঋণে জর্জরিত।
কালের পরিক্রমায় ব্রিটিশ ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে, ইস্ট পাকিস্তান রেলওয়ে এবং অবশেষে বাংলাদেশ রেলওয়েতে পরিণত হয়।
যাত্রীবান্ধব করার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ঘটানো হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির সম্মিলন। চাকরিরতদের সর্বাধুনিক জ্ঞানচর্চার সুযোগ উন্মুক্ত করা হচ্ছে। শিক্ষা-প্রশিক্ষণ, পরিচর্যা খাতকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে রেলের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।