মুক্তিযোদ্ধা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো মুক্তিযোদ্ধা দিবস। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ২০০৪ সাল থেকে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম দিন বেসরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা এই দিবসটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের দাবি জানিয়েছেন।
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান বাবুল, নুরুল আখতার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম, রোকনুজ্জামান রোকন, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট সেলিম মোহাম্মদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশীদ সুমন, ঢাকা মহনগর দক্ষিনের সভাপতি হাজি ইদ্রিস ব্যাপারি, শ্রমিক জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সর্দার খোরশেদ, ছাত্রলীগ (হা-ন) এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল হক ননী প্রমুখ। ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের পক্ষ থেকেও পুস্পার্ঘ অর্পণ করা হয়।
সকাল ৯টায় মীরপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে জাসদের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। জাসদ ঢাকা মহনগর পশ্চিম কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। মহানগর পশ্চিম কমিটির সভাপতি মাইনুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নুরুল আখতার, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন মোল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোহসীন, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, মহানগর পশ্চিম কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুন্নবী।
বক্তারা ১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা উদযাপন এবং জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানজনক মানবিক জীবন নিশ্চিত করার জন্য দাবি জানান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন মফিজুর রহমান বাবুল, হাসান আলী বাবু, সর্দার খোরশেদ, শহীদ চিশতী, এড. আবু হানিফ, রফিকুল ইসলাম রাজা, শিরীন শিকদার প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও স্মৃতিচারণসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-স্মারকগুলোতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
২০০৪ সালের ১২ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ‘মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশ’ থেকে ১ ডিসেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ উদযাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এ মহাসমাবেশের আয়োজক হলেও এ আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছিল।
এই দিবস সম্পর্কে জাসদ সভাপতি ও বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট বা বিএলএফ বা মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের প্রধান হাসানুল হক ইনু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘সরকার মুক্তিযোদ্ধারের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অনেক ভালো পদক্ষেপ নিয়েছেন। এজন্য সরকারকে ধন্যাবাদ। মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানাতে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত করতে বিজয়ের মাসে প্রথম দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস উদযাপনের বাঙালির মধ্যে বীরত্বের চেতনা ও গৌরব চির জাগরূক রাখবে।’ তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী ১ ডিসেম্বরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসাবে ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
কয়েক বছর থেকে বেসরকারিভাবে দিবসটি পালনের পর গত বছরের (২০২০) ১৮ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ১ ডিসেম্বরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস উদযাপনের প্রস্তাব করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা যখন থাকবেন না, তখনও যাতে তাদের স্মরণ করা হয়-সে কারণে মুক্তিযোদ্ধা দিবস উদযাপনের এ প্রস্তাব।
এপি/এএন