তালা দেওয়া তারিখ টাকায় খোলে!
পাসপোর্ট সেবা এখন অনেকটাই অনলাইন কেন্দ্রিক। নতুন হোক আর নবায়ন হোক হাতের কাছে কম্পিউটার থাকলে নিজেই অনলাইনে প্রয়োজনীয় সব তথ্য পূরণ করে প্রিন্ট আউট নিয়ে ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিলেই পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রথম কাজ শেষ হয়। বিষয়টি যতোটা সহজ মনে হচ্ছে, বাস্তবে ততোটাই জটিল।
অনলাইনে সব তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করার পর জমা দিতে গিয়েই ঘটছে বিপত্তি। জমা দেওয়ার জন্য কাঙ্ক্ষিত তারিখে ক্লিক করলেই দেখাচ্ছে খালি নেই। এক বা দুই দিন না, এক সপ্তাহ বা এক মাসও না। মিনিমাম ২ থেকে ৩ মাস পর তারিখ পাওয়া যায়। প্রতিদিন অনলাইনে ফরম পূরণ করতে গিয়ে এরকম বিড়ম্বনায় পড়ছেন পাসপোর্ট সেবা গ্রহীতারা।
কেন এমন হচ্ছে? কাঙ্ক্ষিত তারিখ কেন পাওয়া যাচ্ছে না? রহস্যটা কোথায়?
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিপ্তরের গিয়ে ভুক্তভোগী ও সেবাদানকারী কম্পিউটার দোকানের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে ‘ঢাকাপ্রকাশ’ টিম জানতে পেরেছে পেছনের কাহিনি।
এবার জানা যাক, কিভাবে পাসপোর্ট ফরম জমা দেওয়ার তারিখ সহজে পাওয়া যায়। রাব্বী নামের একজন যুবক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমি পাশেই একটি কম্পিউটারে দোকানে ফরম পূরণ করতে গিয়েছি। সব ধাপ শেষে যখনই কাঙ্ক্ষিত তারিখের জন্য ক্লিক করতে গেল তখন দেখাল অক্টোবর মাসের ২ তারিখ খালি আছে। তার মানে জমা দিতে হলে অক্টোবর মাসে আসতে হবে। এটা দেখে আমি যখন হতাশ ঠিক তখনই ওই কম্পিউটার দোকান থেকে বলেছে, আপনি চাইলে কালকেই দিতে পারবেন। এরজন্য বাড়তি টাকা দিতে হবে।
রাব্বীর কথার সূত্র ধরে সেখানেই কথা হয় রনি নামের এক সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ডেট ফেট কিছু না। ডেট তো আমরা বুকড করে রাখছি। ভেতরে টাকা দেই না, আমরা অনেকগুলো ডেট ফিক্সড করে রেখেছি। আপনি টাকা দিলে কালকেই জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।’
রনির কথা অনুযায়ী ভেতরে যে দপ্তর থেকে জমার তারিখ নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেখানে কাছাকাছি তারিখগুলো বুকড করে রাখা হয়। তাদের কাছে টাকা গেলে তারা সেই তারিখে জমার ব্যবস্থা করে দেন।
আরেকজন ভুক্তভোগী বেলাল হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট করতে দিয়েছি। ডেলিভারি ডেট ছিল ৩১ জুলাই। ওইদিন অফিসে এসে জিজ্ঞাসা করলাম। বলল, পাসপোর্ট রেডি হয়নি। এসবি রিপোর্ট আসেনি। আমি পুলিশকে ফোন দিলাম। পুলিশ বলল আমার রিপোর্ট ২৫ জুলাই পাঠিয়ে দিয়েছে।
এক সপ্তাহ অপেক্ষা করলাম। তারপর এলাম। তখনও একই কথা বলে যে এসবি রিপোর্ট হয়নি। আবার গ্রামে ফোন দিলাম পুলিশকে। স্থানীয় পুলিশ বলল, আপনার রিপোর্ট আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি।
আবার আমি এলাম। আবারও বলে এসবি রিপোর্ট আসেনি। তাদের এক কথা এসবি রিপোর্ট না পেলে কিছু করতে পারব না। আমি যতই বলি এসবি রিপোর্ট হয়ে গেছে। তারা কথা শোনে না।
এভাবে তিন সপ্তাহ আমি এখানে এসেছি। আজকে এলাম। আজকেও তারা বলছে এসবি রিপোর্ট আসেনি। আগামী সপ্তাহে আসেন। আমি চার সপ্তাহ ধরে ঘুরছি।
আমি ইমার্জেন্সি পাসপোর্টের আবেদন করেছি। আমাকে কেন নির্দিষ্ট করে বলে না যে, আপনার এই সমস্যা।
এক প্রশ্নের জবাবে বেলাল হোসেন বলেন, এসএমএস এসেছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে। তারপরও পাসপোর্ট পাচ্ছি না। ওরা শুধু বলে এসবি রিপোর্ট হয়নি। আমি এটার জন্য মালিবাগ গিয়েছি। সদরঘাট গিয়েছি।
ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট ১০-১১ দিনে পাওয়া যাওয়ার কথা। অথচ এক মাসের বেশি হয়ে গেল। পাসপোর্ট পাচ্ছি না। সব কাজ বাদ দিয়ে এটার পিছে দৌড়াচ্ছি।
এখন আমার রাগ হচ্ছে যে এগুলো না করাই ভাল। সরকারি কাজে এত ঝক্কিঝামেলা! তারপরে ইমার্জেন্সি ফি দিয়েও এই অবস্থা। মন চায় গালাগালি করি।
টাকাপয়সা চেয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে বেলাল হোসেন বলেন, দালালরা টাকা চায়। কিন্তু কোনো ডকুমেন্ট ছাড়া আগে টাকা দিলে টাকা মার যাওয়ার আশঙ্কা আছে মনে করে টাকা দেইনি।
এনএইচবি/আরএ/