২ বছর পাসপোর্টের জন্য ঘুরছেন ইতালি প্রবাসী সিরাজ!
দুই বছর ধরে পাসপোর্টের জন্য ঘুরছেন ইতালি প্রবাসী সিরাজ উল্লাহ। তিনি রিনিউ করার জন্য আবেদন করেছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি পাসপোর্ট পাননি। পুরোনো পাসপোর্টের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। ফলে ইতালিতে ফিরতে না পারায় ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।
হতাশ সিরাজ উল্লাহ কী করবেন বুঝতে পারছেন না। পাসপোর্ট অফিসে একগাদা কাগজপত্র নিয়ে ঘুরছেন তিনি। কর্মকর্তারা তাকে এক রুম থেকে আরেক রুমে পাঠাচ্ছেন। দুই বছর ধরে সিরাজ উল্লাহ শুধু আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে ‘এই রুম-সেই রুম’ করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বরাবরের মতো মঙ্গলবারও (২৩ আগস্ট) সিরাজ উল্লাহ আগারগাঁও পাসপোর্টের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সেই সময়ই ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে কথা হয় তার। হাতে যথারীতি একগাদা কাগজপত্র।
কথা বলতে শুরু করেন সিরাজ উল্লাহ। ক্ষোভ ও হতাশায় কাঁপতে কাঁপতে সিরাজ উল্লাহ বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আমি পাসপোর্ট রিনিউয়ের আবেদন করেছি। এমআরপি পাসপোর্ট। প্রত্যেকটা রুমে রুমে ঘুরছি। কিন্তু পাসপোর্ট পাইনি।
সিরাজ উল্লাহ বলেন, ‘আমি থাকি ইতালিতে আজ ১৯ বছর ধরে। শুধু পাসপোর্টটা রিনিউয়ের জন্য দিয়েছি। পাসপোর্টটা এখনো পাইনি। আমাকে শুধু লেফট-রাইট করাচ্ছেন উনারা। তারা শুধু বলেন এখানে যান ওখানে যান। আমি শুধু ঘুরি। কবে পাব সেটা তারা বলেন না।
ইতালি প্রবাসী এই বাংলাদেশি আরও বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমি পাসপোর্টের সহকারী পরিচালক মো. ইউসুফ সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বলছেন, উত্তরার কাজ উত্তরায় হয়। অথচ উত্তরা থেকে আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে।’
হতাশ ও দিশেহারা সিরাজ বলেন, ‘আমরা বিদেশি মানুষ। এখানকার কিছুই বুঝি না। যে যেটা বলে সেটাই শুনি আমরা। কী করব বুঝতে পারছি না।’
আপনার কাছে কি নির্দিষ্ট কোনো কাগজ চেয়েছে পাসপোর্ট অফিস থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজ উল্লাহ বলেন, ‘এমন কোনো কাগজ চাওয়া হয়নি যেটা দিতে পারিনি বলে তারা পাসপোর্ট দিচ্ছেন না।’
সিরাজ উল্লাহ আরও বলেন, উত্তরার অফিসে গিয়েছি। উত্তরার অফিস থেকে আমাকে প্রথমে বলেছে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে একটা এফিডেভিট করান। তাদের কথা অনুযায়ী সব কাগজের এফিডেভিটও করিয়েছি।
সিরাজ আরও বলেন, এখন আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ। ইতালির ভিসার মেয়াদও শেষ। দেখেন আমার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ডকুমেন্ট নিয়েছেন। সব কাগজ নিয়ে তারা জমা রেখেছেন। বলেছেন, হানড্রেড পার্সেন্ট ওকে। ১৫-২০ দিন পরে এসে নিয়ে যাবেন। প্রতিবার এমন কথা বলেন।
একবার ফোন দিয়েও ডাকা হয়েছিল দাবি করে সিরাজ বলেন, ফোন দিয়ে ডেকে বলা হলো আমাকে একটা আন্ডারটেকিং দিতে হবে পাসপোর্টের জন্য। এই দেখেন আমি আন্ডারটেকিংও দিয়ে এসেছি।
৩০২ নং রুমে একজন মহিলা অফিসার আছেন যিনি এক বছর শুধু ওখানেই ফাইলটা ফেলে রেখেছিলেন দাবি করে সিরাজ উল্লাহ বলেন, সব ধরনের কাগজের সত্যায়িত কপি উনারা চেয়েছিলেন। সেগুলোও দিয়েছি। এটার নিয়ম নাই তারপরও চেয়েছেন তারা। আমিও দিয়েছি।
এ সময় পাসপোর্ট এবং রিনিউয়ের ২০২০ সালের রিসিট দেখান সিরাজ উল্লাহ। ইতালি ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের ভিসাও দেখান তিনি।
ক্ষুব্ধ সিরাজ উল্লাহ বলেন, ‘আমি একজন প্রবাসী। আমরা কঠোর পরিশ্রম করে দুটা পয়সা বাংলাদেশে পাঠাই। সরকার পায়। আমার মা-বাবা-ভাই-বোন সবাই বিদেশে থাকেন। আমি থাকি ইতালি। কিন্তু আমাদের জন্য পাসপোর্ট অফিসের লোকদের কোনো প্রাণ কাঁদে না।’
সিরাজ বলেন, ‘আমি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই অনুরোধ করছি যেন আমার না শুধু, এমন ভুক্তোভোগী যারা আছেন সবাই যেন তাদের পাসপোর্টগুলো পান। আমার মতো এমন অনেকেই আছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধূরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘একজন মানুষ দুই বছর ধরে পাসপোর্ট পাবে না এটা হতেই পারে না। উনার কোনো সমস্যা আছে নিশ্চয়ই। আপনি পাসপোর্ট নাম্বার দেন। যদি আমার অফিসাররা দায়ী হন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
আরইউ/এমএমএ/