পদ্মা সেতুতে গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলা চলছেই...
দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো ও স্পর্শকাতর স্থাপনা পদ্মা সেতুতে ব্যক্তিগত গাড়ি দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা ও আড্ডা দেওয়াসহ সবকিছু চলছে। সেতুতে যান চালুর প্রথম দিন ছিল মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য। আর এখন ব্যক্তিগত গাড়ি, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস পদ্মা সেতুর উপর দাঁড় করিয়ে ছবি তুলছেন অনেকেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেতুতে দায়িত্ব পালন করলেও উৎসুক মানুষের এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করা যাচ্ছে না।
বুধবার (২৯ জুন) সরেজমিন পদ্মা সেতুর মাওয়া থেকে জাজিরা এবং জাজিরা থেকে মাওয়া এলাকায় যাতায়াত করে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
বুধবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে রওনা দিয়ে সকাল ৮টায় পৌঁছা গেল পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায়। গাড়ির খুব একটা চাপ নেই। টুঙ্গিপাড়া অভিমুখী একটি যাত্রীবাহী বাস 'টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস'। আমার সামনে একটি প্রাইভেটকার।
টোলপ্লাজার কাউন্টারে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল সামনে গাড়ি থামানোর স্বয়ংক্রিয় বারটি উঠানো। কাউন্টারে দায়িত্বরত একজনকে জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, স্যার, গাড়ির চাপ থাকে তো তাই এটি উঠিয়ে রেখেছি।
সামনে একজন দাঁড়িয়ে ট্রাফিকের ভূমিকায় গাড়ি থামাচ্ছেন। তিনি টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের লোক। যাক টোল পরিশোধ করে গাড়ি চলল জাজিরা অভিমুখে। ভায়াডাক্ট অতিক্রম করে মূল সেতুতে উঠে কিছুদূর যেতেই দেখা গেল প্রাইভেটকার থামিয়ে লোকজন গাড়ি থেকে নেমে ছবি তুলছেন। তাদের পাশ দিয়েই দ্রতগতিতে যাচ্ছে যানবাহন। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেদিকে তাদের কোনো দৃষ্টি নেই। আরেকটু সামনে যেতে দেখা গেল আরও কয়েকটি গাড়ি সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে। সেসব গাড়ি থেকে নেমে নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত ছবি উঠানোর কাজে। তাদের বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই। হঠাৎ চোখ গেল সেতুর মধ্যবর্তী সড়ক বিভাজনের ডান পাশ থেকে একজন সেনা সদস্য সেতুতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনদের দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য জোরে জোরে চিৎকার করছেন। হাতে মোবাইল দেখিয়ে তাদের কিছু একটা বলছেন। লক্ষ্য করা গেল এক যুবক তার সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে উঠছেন। কিন্তু একটু অদূরে থাকা গাড়িগুলো সেতুর উপরেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
শুধু মাওয়া থেকে জাজিরার দিকে যাওয়ার প্রান্তই নয়, জাজিরা থেকে মাওয়ার দিকে যাওয়ার পথেও সেতুর বিভিন্ন স্থানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ছবি তুলছেন অনেকে। পোশাক পরা দুই পুলিশ সদস্যকেও সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে। সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে জাজিরাপ্রান্তে যেতে যেতে এটা স্পট বুঝা গেল যে, সেতুতে কঠোর বিধিনিষেধের কোনো বালাই নেই। সবই আছে সরকারি আদেশে।
২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগেই সেতুতে গাড়ি নিয়ে না দাঁড়ানোসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল সেতু বিভাগ। কিন্তু উদ্বোধনের পর দিন ২৬ জুন যখন যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হলো তখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চরম বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। মোটরসাইকেলের চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি। মোটরসাইকেল আরোহী এবং প্রাইভেটকারের আরোহীরা সেতুর মাঝখানে বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে দলবেঁধে ছবি তোলা, সেলফি তোলা, টিকটক করা, নাচগান করা, সেতুর নাট বোল্ট খুলে ফেলা, আড্ডা দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে সেতুকে ব্যস্ত করে রেখেছিলেন।
সেদিন রাতে পদ্মা সেতুর মাওয়াপ্রান্তে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই জন মারা যান। এ ঘটনার পরপরই সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুতে সাময়িকভাবে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে মোটরসাইকেল বন্ধ থাকলেও প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা বন্ধ হয়নি।
২২ জুন আরেক আদেশে সেতু কর্তৃপক্ষ, সেতুর নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেয়। একইসঙ্গে সেতু পারাপারের সময় সেতুর কোথাও দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সেতুর উপর দাঁড়ানো নিষিদ্ধ করে।
নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতু দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোর সবচেয়ে বড় ও স্পর্শকাতর স্থাপনা।
এনএইচবি/আরএ/