শাহজালাল বিমান বন্দর
ইমিগ্রেশন ও করোনা ডেস্কে দীর্ঘ লাইন

থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজের জন্য গত ১০ ডিসেম্বর থেকে রাতে ফ্লাইট বন্ধ থাকছে। এ কারণে দিনে বেড়েছে ফ্লাইটের চাপ। ফলে ইমিগ্রেশন ও করোনা ডেস্কে যাত্রীর চাপ বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। লাগেজ পেতেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিমাবন্দরের ক্যানোপি-১ ও ২ এ গিয়ে দেখা গেছে, একসঙ্গে বহু যাত্রী বের হচ্ছেন। একসঙ্গে পাঁচটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করায় যাত্রীদের চাপ ছিল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। ইমিগ্রেশন শেষ করে বাইরে বের হয়ে আসা বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। সৌদিআরব থেকে আসা যাত্রী ফিরোজ আলম বলছিলেন, লাগেজ পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।
আমার লাগেজ বেল্টের বাইরে পড়েছিল। এর আগে করোনা টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে গিয়ে লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ফিরোজ আলমের অভিযোগ একসঙ্গে কয়েকটি ফ্লাইট নামায় যাত্রীর সংখ্যা ছিল বেশি। সেই তুলনায় করোনা ডেক্সে লোকবল ছিল কম। কলকাতা থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে আসা খোরশেদ আলম বলেন, লাগেজ পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। এটা কমানো দরকার। একই ফ্লাইটে কলকাতা থেকে আসা ফয়সল জানান, করোনা টেস্টের বুথেই সময় চলে গেছে ঘণ্টার উপরে। দেশে ফেরা যাত্রীদের যে চাপ তাতে বুথ আরও বেশি দরকার ছিল। নম্রতা এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যডিলেডে থেকে। সিঙ্গপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে আসা এই তরুণী বলেন, যেভাবে ভোগান্তির কথা ভেবেছিলাম সেই তুলনায় সহজেই পার পেয়েছি। তবে করোনা টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে লাইনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।
সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সে ফিরেছেন ওমর ফারুক। ১১টা ২০ মিনিটে ফ্লাইট অবতরণ করলেও তিনি সব কাজ সম্পন্ন করে বিমানবন্দরের ক্যানোপিতে আসতে পেরেছেন ১২টা ৫৬ মিনিটে। তিনি বলেন, এই দীর্ঘ সময় লেগেছে মূলত করোনা টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে গিয়ে। সেখানে কাউন্টার কম থাকায় দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছে। একই অভিযোগ করেন মো. ইয়াছিন নামে আরকে যাত্রীর। যিনি একই ফ্লাইটে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন।
চট্টগ্রামের জসিম উদ্দিনও আসছিলেন আবুধাবী থেকে। তিনি বলেন, ফ্লাইট আসতেই বিলম্ব করেছে। তবে বিমাবন্দরে ভোগান্তি খুব একটা হয়নি। ইতালির রোম থেকে আসা ফয়েজ আহমদ ও শিল্পী দম্পতি নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, দুটি জায়গায় খুবই ভোগান্তি হয়েছে। একটি হচ্ছে করোনা বুথ এবং অন্যটি লাগেজ পেতে। করোনা বুথে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। শুধুমাত্র কাউন্টার কম থাকায়। যাত্রীর চাপ অথচ কাউন্টার কম।
যাত্রীর বিভিন্ন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদুল আহসান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, যখন একসঙ্গে ফ্লাইট নামে তখন কিছুটা সমস্যা হয়। আমাদের রিসোর্সের বিষয়টাও তো দেখতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ সেবাটুকু করার। তিনি বলেন, থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজের কারণে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে রাতে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দিনের বেলা ফ্লাইটের চাপ বেড়েছে। ফলে একসঙ্গে চার-পাঁচটা ফ্লাইট যখন নামে তখন সমস্যাটা তৈরি হয়। কিন্তু একটি বা দু’টি ফ্লাইট নামলে দ্রুতই যাত্রীরা বের হতে পারছেন। তিনি বলেন, করোনা টেস্ট রিপোর্ট জমার জন্য আটটি বুথ আছে। চাপ বাড়লে সেখানেও কিছুটা সময় লাগে।
গত কিছুদিন ধরেই শাহজালাল বিমানবন্দরে নানারকম বিশৃংখলা বিরাজ করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এমনকি এসব বিশৃংখলা বন্ধে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিমাবন্দরে সৃষ্ট বিশৃংখলা, যাত্রীদের ভোগান্তি এবং হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল।
মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, যেহেতু রাত্রিকালীন সময়ে বিমানবন্দরে ফ্লাইট উঠানামা বন্ধ থাকবে, সেকারণে দিনের বেলা চাপ থাকবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিমাবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
এমনকি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী নিজে বিমানবন্দর সরেজমিন ঘুরে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাত্রী হয়রানি বন্ধসহ সব ধরণের ভোগান্তি দূর করতে। কিন্তু কিছুতেই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল না। বরং ভোগান্তি মাত্রা দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছিল।
এই পরিস্থিতিতে গত ১৮ ডিসেম্বর শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃংখলা দেখা দেয়। যাত্রী ভোগান্তি ছিল সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ। এ নিয়ে দেশের প্রায় সকল সংবাদমাধ্যম ওই দিন রিপোর্ট করে।
চতুর্থ দিনে ২২ ডিসেম্বর বুধবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী পরিস্থিতি সরজমিন দেখতে আবারও বিমানবন্দর যান। যাত্রী হয়রানি, অব্যবস্থাপনা ও বিশৃংখলা বন্ধে কঠোর নির্দেশ দেন। দায়িত্বে অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা দেন প্রতিমন্ত্রী।
তার একদিন পর আজ শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে করোনা বুথ, ইমিগ্রেশন এবং বেল্টে লাগেজ আসতে বিলম্বের কথা জানা গেল। তবে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
এনএইচবি/এসএম
