সততাই আমার শক্তি: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “ড. ইউনূস একটা এমডি পদের লোভে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে বিশ্ব ব্যাংক থেকে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করিয়েছিল। তারা ভেবেছিল, আমরা এখানে সারেন্ডার করব। আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, এটা মনে রাখবেন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, করব না। এই দেশকে আমরা ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি। দেশের মানুষের মাথা হেট হোক, এটা কোনো দিন করব না। আমার সততাটাই হচ্ছে আমার শক্তি, আর বাংলাদেশের জনগণ।”
বুধবার (৮ জুন) রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে আনিত প্রস্তাবের সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতা আমার কাছে বড় কিছু না। ক্ষমতা আমার কাছে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ, সেটাই করে যাচ্ছি। এই দেশের মানুষ যেন গরীব না থাকে, দরিদ্র না থাকে, প্রত্যেকটা মানুষ যেন ঘর পায়, কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। দেশবাসীর সমর্থন বড় শক্তি।
তিনি বলেন, একটা এমডি পদের জন্য একটা দেশের এতো বড় ক্ষতি কীভাবে করে? তখনকার সমস্ত ইমেইল দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের কাছে সেন্ড করা আছে। এই যে, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করা। আমরা বিশ্ব ব্যাংকের দোষ দিচ্ছি, কিন্তু ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে দিয়ে এটা করানো হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট তার শেষ কর্মদিবসে সেদিন স্বাক্ষর করে বন্ধ করে দিয়ে গেছে টাকা। তারপর চাপ আসে- অমুককে গ্রেপ্তার করতে হবে, অমুককে জেলে পাঠাতে হবে, তাহলে টাকা দেবে। আমি বলেছি, আমার কোনো অফিসারকে বা আমার কাউকে আমি অপমান করতে দেব না। সেসময় যোগাযোগমন্ত্রীকে অপসারণ করা, মোশাররফকে তো গ্রেপ্তার করেই দিল। আমি জানি, কোনো টাকা ছাড় হয়নি। দুর্নীতিটা কোথায় করা হলো? তারপর অমুককে গ্রেপ্তার করলে টাকা দেবে, এ ধরনের প্রস্তাব আসল। আমি বললাম, পদ্মা সেতু আমি করব না। যেদিন নিজের টাকায় করতে পারব, সেই দিন করব কিন্তু আমার দেশকে অপমান করে কিছু করতে দেবো না।
তিনি বলেন, তখন আমাকে ভয় দেখায়, যদি এটা না হয় আপনার নির্বাচনের কী হবে? আমি বলেছিলাম, জনগণ ভোট দেবে না, ক্ষমতায় আসব না। ২০০১ সালে আমেরিকা চাপ দিয়েছিল, গ্যাস বিক্রি না করলে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। তখন আমি ক্ষমতায় আসতে পারিনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল, সে ক্ষমতায় এসেছিল। এটা তো চোখের সামনে। সে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে একটা মানসিক যন্ত্রণা আমার পরিবারের উপর দিয়ে গেছে। আমার মেয়ে, আমার ছেলে, আমার বোন, তাদের উপর মানসিক চাপ। জয়কে নিয়ে যখন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, তোমার মাকে বল এটা বন্ধ করতে, না হলে তোমার বিরুদ্ধে অডিট হবে। তখন জয় বলেছে, কর, তবে আমি আমার মাকে এটা বলতে পারব না। আমার বিরুদ্ধে যত তদন্ত আছে করতে পার, আমি এখানে কোনো অন্যায় করিনি। এ রকম অবস্থায় আমি কিন্তু হেরে যাইনি। আমার সততাটাই হচ্ছে আমার শক্তি, আর বাংলাদেশের জনগণ। এই জনগণকে অপমান করে আমি কোনো কিছু করব না। আমি জানি, যখনই সেতু নির্মাণ শুরু করে দিলাম, তখনই সকলের টনক নড়ল। তখন বাংলাদেশকে সবাই সমীহ করতে শুরু করল। হ্যাঁ, বাংলাদেশ পারে। জাতির পিতা বলেছিল, কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারবে না। তো কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারে নাই, পারবেও না ইনশাল্লাহ। এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এখন সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে। ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। আগামীকাল বাজেট দিচ্ছি। বাজেটও ঠিকমতো দেব, তবে সবাইকে কৃচ্ছতা সাধন করতে বলব। এক ইঞ্চি জমি যেন পড়ে না থাকে। খাবারের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে। আমেরিকা ইউরোপে প্রত্যেক দেশে মন্দা। সবাইকে মিতব্যায়ী হতে হবে, সাশ্রয়ী হতে হবে।
সংসদ নেতা বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। টেকনোলজি সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের জ্ঞান হয়েছে। ভবিষতে আরও উন্নত কাজ করতে পারব। বাংলাদেশ যে নিজেরা পারে এই ধারণাটা, এটাই বাংলাদেশের মর্যাদা সারা বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আছি বলে উন্নয়ন করতে পেরেছি, পদ্মা সেতুও করতে পারলাম। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি যখন বলেছি, নিজের টাকায় করব, এদেশের মানুষ এগিয়ে এসেছে। এখনও আমার কাছে চেক আছে, যে যা পেরেছে দিয়ে গেছে, আমি চেকগুলো ভাঙাইনি। রেখে দিয়েছি। কারণ, আমরা তো টাকা জোগার করে শুরু করে দিয়েছি, আমি তো পারব করতে। আমরা নিজেদের অর্থায়নে করেছি।
তিনি বলেন, কেন দাম বেড়েছে, এটা-সেটা নানা কথা। মেগা প্রজেক্ট কেন করা হচ্ছে? অর্থনীতিবিদ, প্রফেসর তাদের মুখ থেকে এসব কথা শুনলে কেমন লাগে? কী মানসিকতা এদের। কত হীনমন্যতায় ভোগে এরা! জানি তারা কনসালটেন্সি পাবে, এই তো? আরতো কিছু না। অথবা ইউনূস যদি কিছুটা উচ্ছিষ্ট বিলায় এটার জন্যই তারা এটা করছে।
এসএম/এমএসপি