আসামের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন শুক্রবার (২৭ মে) কৈনাধারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
শনিবার (২৮ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করেন যে, আসাম ও ভারত তার হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে, কারণ তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে আসামে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা ভারত থেকে আসা যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ২০০টি বৃত্তি বাড়ান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ড. মোমেন বাংলাদেশের পালিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২০২১ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করেন। বাংলাদেশ এবং ভারত যৌথভাবে ঢাকা এবং নয়াদিল্লি ছাড়াও বিশ্বের ১৮টি শহরে 'মৈত্রী দিবস' হিসেবে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী ব্যবসা-বাণিজ্য, কানেকটিভিটি এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রচারের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের সাধারণ সুবিধার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাম্প্রতিক গতির প্রশংসা করেন।
ড. বিশ্ব শর্মা কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের সাফল্যের প্রশংসা করেন। তিনি ব্রিটিশ আমলে বাণিজ্যে চট্টগ্রাম বন্দর নগরীর সঙ্গে রেল যোগাযোগের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান যে আসাম উন্নত চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে এবং চিকিৎসা ও অধ্যয়নের উদ্দেশে বাংলাদেশের জনগণের গন্তব্য হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন যে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা হলো মূল কারণ যা আসামের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করেছে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সন্ত্রাস ও বিদ্রোহের প্রতি তার সরকারের 'জিরো টলারেন্স নীতি'র জন্য ধন্যবাদ জানান।
এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক এবং অনেক ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করছে। ভারতে বাংলাদেশ চতুর্থ বৃহত্তম রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাম ও সিলেটের মানুষের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী সংযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারত তাদের সেরা সম্পর্ক উপভোগ করছে। তিনি জোর দেন যে আসাম বাংলাদেশের গতিশীল আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির সুবিধা নিতে পারে।
ড. মোমেন দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো এবং পর্যটনের প্রসারের উপর জোর দেন। তিনি পরামর্শ দেন যে নদী পরিবহন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিদ্যমান সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং আশা করেন আগামী ৫০ বছরে এটি আরও শক্তিশালী হবে।
বৈঠকটি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় যেখানে দুই নেতা উভয় দেশের জনগণের স্বার্থে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন ড. মোমেন। এসময় আসিয়ান দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের পাশাপাশি কেন্দ্র ও রাজ্যের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন৷
ড. মোমেন ২৮-২৯ মে ২০২২-এর মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য ন্যাচারাল অ্যালাইজ ইন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারডিপেনডেন্স (NADI)-এর তৃতীয় সংস্করণে যোগ দিতে শুক্রবার গুয়াহাটিতে পৌঁছেছেন। তিনি আজ আজ NADI-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে একটি বিশেষ ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গুয়াহাটি সফরের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসামের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আরইউ/আরএ/