প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে নিজস্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আনছে রেলওয়ে
২০১৮ সালে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের অনুমোদন দেয় একনেক। কিন্তু তিন বছরে এ প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি সামান্য। পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের তিন বছর চলে যায় পরামর্শক নিয়োগ দিতেই।
প্রকল্পের মেয়াদ আর দুই বছরের কম থাকলেও পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাড়তি আড়াই বছরের জন্য। প্রচুর সময় নষ্ট হওয়ায় বেড়ে যায় প্রকল্প ব্যয়। এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে এসে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ‘বিআর কনসালটেন্সি কোম্পানি’ নামে একটি নিজস্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইতোমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তৈরির খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক সার্ভিসেস (রাইটস) এবং বাংলাদেশের আইআইএফসি’র গঠন ও কার্যাবলী পর্যালোচনা করে ‘রাইটস’র মতো করেই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এটি মূলত রেলের পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং (পিএসইউ) হিসেবে গঠনের চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানা গেছে।
পরিকল্পনা মোতাবেক, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘বিআর কনসালটেন্সি কোম্পানি’ গঠনের খসড়া প্রস্তাবে একজন চেয়ারম্যানসহ পাঁচ থেকে ২০ জন পর্যন্ত সদস্য নিয়ে একটি বোর্ড অব ডিরেক্টর থাকবে। এ ছাড়া কি ম্যানেজমেন্ট পারসোনাল হিসেবে একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) পাঁচ জনের একটি দল থাকবে।
ইতোমধ্যে খসরা প্রস্তাবটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। খসড়া প্রস্তাবটি নিয়ে বর্তমানে পর্যালোচনা চলছে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বিষয়টি পুনঃমূল্যায়ন করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই উদ্যোগের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী বলেন, অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সময় মতো পরামর্শক নিয়োগ দিতে না পারা। সঠিক সময়ে পরামর্শক নিয়োগ দিতে না পারার কারণে প্রকল্প ঝুলে থাকে, বেড়ে যায় ব্যয়। এতে রাষ্ট্রের অর্থ নষ্ট হয়। আমরা রেলের উন্নয়ন কার্যক্রমকে তরান্বিত করতে এ উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, দরপত্রের মাধ্যমে পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা জটিলতার কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়ন শুরু করতেই প্রচুর সময় লেগে যায়। রেলের নিজস্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থাকলে সরাসরি প্রকল্প যাচাইয়ের কাজ শেষ করা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, গত একশ’ বছরে দেশটির রেল পরিষেবা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। রেলের উন্নয়নে ভারত ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক সার্ভিসেস (রাইটস)। প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে রাইটসের কার্যক্রম শুধু ভারতীয় রেলওয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের ৫৫টি দেশে তাদের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে কনসালটেন্সি সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। রাইটসকে বলা হয় ভারতের মিনি রত্ন প্রতিষ্ঠান। এটি শুধু পরামর্শক প্রতিষ্ঠানই নয়, ভারতের রেলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের বাইরেও নানামুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মোট ১৭টি পিএসইউ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতের রাইটসের এই সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে নিজস্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
এই উদ্যোগ সফল হলে পর্যায়ক্রমে পর্যটন, শিক্ষা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসাসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে একই ধরনের কার্যক্রম সম্প্রসারণের চিন্তা রয়েছে বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, নতুন লোকোমোটিভ কেনার পাশাপাশি রেলকে ঢেলে সাজাতে ৩৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ২৬টি প্রকল্প একবার করে সংশোধন করতে হয়েছে। এছাড়া কিছু প্রকল্প ১০ বছর আগে নেওয়া হলেও এখনও শেষ হয়নি। এতে বাড়ছে প্রকল্প ব্যয়।
উল্লেখ্য, ১৮৬২ সালে বর্তমানের দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার লাইন স্থাপনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গঠনে নানা উদ্যোগের পাশাপাশি রেলওয়েকে গুরুত্ব দিয়ে অনেকে উদ্যোগ নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে হত্যার পর রেল অনেকটা অবহেলিত হয়ে পড়লেও বর্তমান সরকার রেলওয়েকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- সারাদেশে সিঙ্গেল রেললাইনকে ডাবল লাইনে রূপান্তর করা, ব্রডগেজকে উন্নত করার পাশাপাশি নতুন লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া (বর্তমানে এগুলো চলমান)।
এসজি/