নাম ‘পদ্মা সেতু’, উদ্বোধন ২৫ জুন
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হচ্ছে। আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন পদ্মা সেতুর। এ সেতু চালু হলে ভাগ্য বদলে যাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষের।
মঙ্গলবার (২৪ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর গণভবন গেটে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এর আগে, ওবায়দুল কাদের পদ্মা সেতু উদ্বোধন এবং নামকরণের সারসংক্ষেপ নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমরা দুটো সামারি নিয়ে এসেছিলাম, একটি সামারি উদ্বোধন, তিনি তারিখ দিয়ে সই করেছেন ২৫ জুন। আরেকটি সামারি, সেটাতে তিনি স্বাক্ষর করেননি।'
‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু পদ্মা নদীর নামেই হবে। এটা আমি অন্য কারো নামে দেব না। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কারো নামেও হবে না’।’
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পদ্মায় সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাপানি সাহায্য সহায়ক সংস্থা (জাইকা) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করে। ওই সময়ই ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ওপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন; যার মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণের বীজ বপন করা হয়।
মাঝখানের আট বছর খুব একটা অগ্রগতি না হলেও ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাশের স্বপ্ন পদ্মা সেতুর নকশা চূড়ান্তকরণের কাজ সম্পন্ন হয়। এরমধ্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়। কিন্তু ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংক হঠাৎ করেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এবং বিশ্বব্যাংক নিজেরাই তদন্ত শুরু করে। ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক সরকারের সঙ্গে করা ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে।
কথিত দুর্নীতির অভিযোগ উঠা এবং তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনের পদত্যাগসহ নানান ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ করার ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত বিশ্ব্যাংক দুর্নীতির কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নিজস্ব অর্থায়নে পুরোদমে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে নিজস্ব অর্থায়নে সবচেয়ে বড় যোগাযোগ অবকাঠামো হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে ৪১টি পিয়ারের উপর। তার উপর বসানো হয়েছে ৪২টি স্প্যান। দ্বিতল সেতুর উপরে চার লেনের সড়ক। নিচে রয়েছে রেলপথ। সেতুর ওপরে সড়কভাগে স্ল্যাব বসেছে মোট ২ হাজার ৯১৭টি। আর নিচে সেতুর রেলপথে বসেছে মোট ২ হাজার ৯৫৯টি স্ল্যাব।
পদ্মা সেতু দিয়েই দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গ্যাস সংযোগ। টানা হচ্ছে বিদ্যুৎ লাইন।
২০২১ সালের জুন মাসেই সরকার পদ্মা সেতু খুলে দিতে চেয়েছিল। সেই লক্ষ্যেই কাজ চলছিল। কিন্তু ২০২০ সালে শুরু হওয়া অতিমারী করোনার কারণে সেতুর নির্মাণ কাজের গতি কিছুটা শ্লথ হয়। তবে কাজ থেমে থাকেনি। যার ফলে সেতু খুলে দেওয়ার সময়সীমা পিছিয়ে যায়। তবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বার বার বলছিলেন, ২০২২ সালের জুনের মধ্যেই সেতুর সড়ক অংশ খুলে দেওয়া হবে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এক হবে পদ্মার এপাড়-ওপাড়। পদ্মার বুক চিরে যার এক প্রান্ত ছুঁয়ে থাকবে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, অন্য প্রান্ত শরীয়তপুরের জাজিরা। দূরত্ব কমে আসবে দেশের এক অঞ্চলের সঙ্গে আরেক অঞ্চলের। গতি বাড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতির, চাকা ঘুরবে দ্রুতবেগে। এক শতাংশের বেশি হারে জিডিপি বাড়বে। ভাগ্য বদলে যাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষের। বাড়বে জীবনযাত্রার মানও।
এনএইচবি/এসএম/আরএ/