রাজধানীর সকল জলাধার ভরাট বন্ধের দাবি আইপিডি’র
রাজধানীকে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে আশকোনার জলাশয়সহ সকল জলাধার ভরাট বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। রবিবার (২২) আইপিডি’র এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাজধানীর আশকোনায় ঢাকা মহানগরীর মহাপরিকল্পনা, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা, নগর উন্নয়ন আইন, জলাধার সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশ সংক্রান্ত আইনকে অমান্য করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কর্তৃক জলাশয় ভরাটের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে আইপিডি।
জলাশয় ভরাটের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহল কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রকল্পের নাম শোনা যায় প্রায়ই। কিন্তু সরকারী প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের জলাশয়-জলাধার ভরাটের অন্যায়, অন্যায্য ও অবৈধ উদ্যোগ যখন রাজধানী শহরে সকল নগর কর্তৃপক্ষসমূহের উপস্থিতিতে দিবালোকেই হয়, তখন টেকসই ও বাসযোগ্য নগর গড়তে আমরা কেন ব্যর্থ হচ্ছি, সেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে।
ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কেন আমরা কার্যকর সমাধান তৈরি করতে পারছি না, সেই বিষয়টি এই ধরনের অন্যায় উদ্যোগের ফলে স্পষ্ট হয়ে উঠে। ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে এবং জলাশয়-জলাধার রক্ষায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে ঢাকাকে কোনভাবেই বাঁচানো যাবে না বলে মনে করে আইপিডি।
আসন্ন বর্ষা মৌসু্মে ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার শংকায় ঢাকার নগরবাসী এমনিতেই শংকিত আছে। ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প নেয়া হলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভর করে জলাশয়-জলাধারসমূহের পানি ধারন ক্ষমতার উপর।
একটি নগর এলাকায় জলাশয় এলাকা ১২-১৫ ভাগ থাকা দরকার হলেও ঢাকার জলাশয়-জলাধার এলাকা কমছে আশংকাজনকভাবে। ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় চিহ্নিত জলাশয়-জলাধার নির্বিচার দখলের শিকার হচ্ছে। রাজধানীর অভ্যন্তরে এলাকার ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় চিহ্নিত আশকোনা এলাকার এই জলাশয় বিগত বেশ কিছুদিন যাবত নির্বিচারে ভরাট হলেও এই ভরাট বন্ধের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি, যা অত্যন্ত উদ্বেগের।
ইতিপূর্বে রাজধানীর কুড়িলে জলাধার ভরাট করে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে যা পরবর্তীতে ডিএনসিসি মেয়রের উদ্যোগে এবং হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত করা হয়। এই ঘটনাগুলোতে প্রতীয়মান হয় যে, রাজধানীর জলাশয়-জলাধার রক্ষার ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনাই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে না যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
রাজধানীর মহাপরিকল্পনার এলাকাভুক্ত অধীন যে কোন ধরনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উদ্যোগে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার প্রতিপালন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবহার পরিবর্তনের জন্য টাউন ইমপ্রুভমেন্ট আইন’ ১৯৫৩ অনুযায়ী রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেবার যে বিধান আছে তা কেন বিভিন্ন সরকারী সংস্থা কর্তৃক বারবার লংঘিত হচ্ছে তার নির্মোহ বিশ্লেষণ করা দরকার সরকারের। একই সঙ্গে রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাসমূহ কেন এই ধরনের জলাশয়-জলাধার ভরাটের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না, সেই কারণগুলোও উদঘাটিত হওয়া দরকার।
সরকারি সংস্থাগুলো যখন মহাপরিকল্পনা ও বিদ্যমান আইনের নির্দেশনা না মেনে জলাশয় ভরাটে উদ্যোগী হন, তখন জলাশয় ভরাটের ক্ষেত্রে অন্যান্য দখলদারদের নিবৃত করতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র ও সরকারের নৈতিক অবস্থান অনেক দূর্বল হয়ে পড়ে।
আশকোনার এই জলাশয় ছাড়াও ঢাকার আশেপাশে আমিনবাজার-আশুলিয়াসহ অনেক এলাকার জলাশয়-জলাধার নির্বিচারে ভরাট হচ্ছে। ঢাকাকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সকল ধরনের জলাশয়-জলাধার ভরাটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া ও দোষীদের আইনের আওতায় নেবার জন্য জোর আহবান জানাচ্ছে আইপিডি।
আরইউ/এএজেড