`সততাকে রক্ষা করতে সততার যোদ্ধা হতে হবে’
সততাকে রক্ষা করতে হলে সততার যোদ্ধা হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন খ্যাতিমান সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। বুধবার অনলাইন মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল ঢাকাপ্রকাশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যগত কারণে অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হতে না পেরে ভিডিওবার্তা পাঠান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ভিডিওবার্তায় বিশিষ্ট এই সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ঢাকাপ্রকাশ-কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘ঢাকাপ্রকাশ’ অনলাইন মাল্টিমিডিয়া পত্রিকা বের হচ্ছে, এটি খুবই আনন্দের বিষয়। আমি সর্বান্ত:করণে তাদের অভিনন্দন জানাই যারা এই দায়িত্বটি গ্রহণ করেছেন।
ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে ঢাকাপ্রকাশ-এর শুভ উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিক, লেখক, কবি-সাহিত্যিক, অভিনয়শিল্পী, সংগীত শিল্পী ও সুধী সমাজের প্রতিনিধিগণ।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, দেড়শ বছর আগে ‘ঢাকাপ্রকাশ’ নামে পত্রিকা ছিল। যদি সেই ঐতিহ্য চয়ন করে আবার পত্রিকা বের হয়, তা আমার জন্য অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী এবং তৃপ্তিদায়ক।
সততাকে রক্ষা করা কঠিন এবং দুরূহ মন্তব্য করে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘যতদূর জানতে পেরেছি পত্রিকাটি দুটো জিনিসের ওপরে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে। একটি হচ্ছে সততা। আজকের পৃথিবী টাকার দখলে। সেখানে সততা কী করে থাকবে? কী করে সেই সততাকে রক্ষা করা যাবে? এটি কিন্তু একটি কঠিন এবং দুরূহ দায়িত্ব। সুতরাং ‘ঢাকপ্রকাশ’ পত্রিকাকে প্রথমেই স্মরণ করাব, সততাকে রক্ষা করতে হলে সততার যোদ্ধা হতে হবে।’
সুসাংবাদিকতা সম্পর্কে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘সুসাংবাদিকতার মানে হচ্ছে সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা। সৎ মানে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা। নিরপেক্ষ জিনিসটা কিন্তু একটু কঠিন। আমি আমার একটি বইয়ে লিখেছি, নিরপেক্ষ মানেই সবার বিপক্ষ। কারণ এই পৃথিবী সব দেশ সব জাতি দুটি বড় ভাগে বিভক্ত হয়ে থাকে। এখন আপনি যদি এই দুটি দলের যে কোন একটিতে পড়ে যান, তবে আপনি নিরাপদ।’
নিরপেক্ষ থাকার ‘ঝুঁকি’ সম্পর্কে বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আপনি নিরপেক্ষ থাকলে দুই দলই বলবে যে, আমার দলেও না ওই দলেও না, মাঝখানে হাঁটাহাঁটি করে এই লোকটা দুই দলেরই সন্দেহ বাড়াচ্ছে। একে তো সহ্য করা যাবে না। সেজন্য নিরপেক্ষ থাকা বিরাট একটি কঠিন কাজ।’
এ অবস্থায় ঢাকাপ্রকাশ সম্পর্কে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘যেহেতু ‘ঢাকাপ্রকাশ’ পত্রিকা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা ও সুষ্ঠু সাংবাদিকতার একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত শুরু করতে চায়, আমি মনে করি সেটিও খুব দুরূহ হবে। তার জন্য সংগ্রাম দরকার হবে। সেই যোগ্যতা এবং শক্তি থাকলে ‘ঢাকাপ্রকাশ’ পত্রিকা একটি অসাধারণ পত্রিকা হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে আমি মনে করি।’
বর্তমানে সাংবাদিকতার দুর্দশা সম্পর্কে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘সাংবাদিকতা এদেশে অনেক বড় বড় অবদান রাখলেও গত ত্রিশ বছরের মধ্যে সাংবাদিকতাকে আমরা ক্রমে নিষ্প্রাণ হয়ে যেতে দেখেছি। শক্তিহীন হয়ে যেতে দেখেছি!’
খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘একটি পত্রিকা আমি পড়বো কেন? একটা পত্রিকা আমি পড়বো, পড়ার আগে আমি যে মানুষটি ছিলাম, পত্রিকাটি পড়ার পরে আমি তার থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো মানুষ হয়ে উঠব। আমি আরও উচ্চতর মানুষ হতে চাই। এটিই তো আমার পত্রিকা পড়ার উদ্দেশ্য। কিন্তু আমাদের পত্রিকাগুলো আমাদের বৈশ্বিক মানে তো আমাদের নিচ্ছেই না, জাতীয় মানেও রাখতে পারছে না। আমি মনে করি, এখান থেকে আমাদের মুক্ত হওয়া দরকার।’
পত্রিকাগুলোর ভাষা ও সাহিত্যমান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘পত্রিকাগুলোর বিষয়বস্তুর মান নিচে নেমে যাচ্ছে। সাংবাদিকতা যদি মানবিক মূলবোধ না জাগায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ না জানায়, জনগণের তো দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না।’
ঢাকাপ্রকাশ সততা ও সুসাংবাদিকতার উদাহরণ হবে, জনগণের ভরসা ও আস্থার প্রকাশ হবে এমন প্রত্যাশা করেন বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ।
সততা ও সুসাংবাদিকতা চর্চার ব্রত নিয়ে এগুতে চায় ঢাকাপ্রকাশ। এজন্য বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে কর্মরত আছেন একঝাঁক তরুণ ও মেধাবী সাংবাদিক।
গত ১ নভেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকাপ্রকাশ-এর লোগো উন্মোচন করা হয়। সাতজন বিশিষ্ট সম্পাদক ঢাকা প্রকাশের লোগো উন্মোচন করেন। এরপর থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের শতাধিক বিশিষ্টজন ঢাকাপ্রকাশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারা নিয়ে এসেছে ঢাকাপ্রকাশ। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল। টেক্সট নিউজের পাশাপাশি পোর্টালটিতে থাকছে অডিও এবং ভিডিও নিউজ। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে থাকছে টকশো।
এছাড়া থাকবে ই-পেপার। প্রতিদিনের সংবাদ দিয়ে দিন শেষে হবে ই-পেপার। পাঠক ছাপা পত্রিকার স্বাদ পাবে ঢাকাপ্রকাশ-এর ই-পেপারে।
/আরইউ/এএন