পদ্মা সেতু দীর্ঘ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন প্রধানমন্ত্রী
পদ্মা সেতু দীর্ঘ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুটা যখন হয় আমি কিন্তু সেতুকে ছোট হতে দেইনি। নদী যতটা ওই জায়গায় চওড়া সেটা মাথায় রেখে তারপর বাফার জোন রেখেই কিন্তু আমরা ব্রিজকে করেছি। যেজন্য ব্রিজকে সবচেয়ে দীর্ঘ হয়েছে। যমুনা ব্রিজটা (বঙ্গবন্ধু সেতু) কিন্তু এটাকে চার কিলোমিটারে কমিয়ে আনা হয়। আমি মনে করি এটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু ডিজাইন প্ল্যান আগেই হয়ে গিয়েছিল যেটা আমাদের বেশি কিছু করার ছিল না। আমি শুধু রেললাইনটা সংযোজন করতে পেরেছিলাম। কাজেই আমাদের যে নদীর গতি এবং প্রতি বর্ষার পর নদীর তলদেশে মাটির চরিত্রটা কিন্তু বদলে যায়।’ রবিবার (২২ মে) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের প্রথম সভার শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে সরকার প্রধান একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে যেখানে ঘুর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস হয় সেখানে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের কাজ শুরু করতে বলেন। তিনি বলেন, বদ্বীপটাকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা উন্নত জীবন দেয়া এটা আমাদের জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন। আসলে পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নিতে পারলে যেকোন কঠিন কাজ সমাধান করা যায়। যে পদক্ষেপই আমি নিই সময়ের বিবর্তনে সেগুলি সংশোধন করা, এই মানসিকতাও থাকা উচিত। কাজেই আমরা সেইভাবেই পদক্ষেপগুলি নিয়েছি ও বাস্তবায়ন করেছি। যার ফলে আমরা কিন্তু একটা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ২০২১ থেকে ২০৪১ এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমরা দিয়েছি। প্লান দিয়ে আমরা বসে থাকিনি। আমরা ২১০০ সালের বাংলাদেশ সেটা মাথায় রেখে এই যে আমাদের ডেল্টা প্ল্যান এটা কিন্তু মাথায় রেখে এই বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষকে সুরক্ষিত করা এবং এদেশের মানুষকে সুন্দর জীবন দেয়া, উন্নত জীবন দেয়া এটাই আমাদের লক্ষ্য। যেহেতু আমাদের নদীমাতৃক দেশ। নদীগুলির নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। তাতে পণ্য পরিবহন বা দুর্যোগ মোকাবেলা সবদিকেই সুবিধা হবে। তার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদেরও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা সেগুলও আমরা হাতে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে অভিঘাত থেকে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোন রকম দায় না থাকলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো যে সমস্ত ক্ষতির সৃষ্টি করেছে তার প্রভাবেই কিন্তু এই জলবায়ু পরিবর্তন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর আঘাতটা বাংলাদেশের উপর আসবে। কারণ আমাদের যেহেতু একদিকে বিশাল সমুদ্র, অপরদিকে নদীমাতৃক দেশ। আর হিমালয় থেকে যে নদীগুলি নেমে আসে সব থেকে বেশি পলি আমাদের দেশের ভেতর থেকেই বঙ্গোপসাগরে পড়ে। সেদিকে বিবেচনা করেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে আজকে যে বিশাল সমুদ্ররাশি আমরা পেয়েছি এই সম্পদটাকে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কাজে লাগাতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা এই ক্ষেত্রে কিন্তু ব্লু -ইকোনমি ঘোষণা দিয়েছি। অর্থ্যাৎ সুনীল অর্থনীতি। সমুদ্র সম্পদকে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে গুরুত্বটা হল যে আদিকাল থেকেই এই বঙ্গোপসাগর দিয়েই কিন্তু সারাবিশ্বে ব্যবসা বাণিজ্যটা চলে। কারণ দুপাশে দুটো মহাসাগর এই মহাসাগরের এক সাগর থেকে আরেক সাগরে যেতে গেলে এই বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়েই যেতে হয়। সেদিক থেকে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব কিন্তু অনেক বেশি। কাজেই এইরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ কিভাবে আমাদের অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারি সেটাও আমাদের কিন্তু চিন্তা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের মধ্য দিয়ে আমারা আমাদের পরিবেশ রক্ষা করা। যত্রতত্র শিল্পায়ন যাতে না হয়, ইতোমধ্যে আমরা সেব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছি। ১০০ টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের রাস্তাঘাট করার সময় আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে সমস্ত জলাভূমি বা বিল অঞ্চল সেখানে এলিভেটেড রাস্তা করতে হবে। সেখানে কিন্তু মাটি ভরাট করে কাজ করা যাবে না। অর্থ্যাৎ পানির যে গতি সেটা সেটা যেন ঠিক থাকে। এটা খুব বেশি প্রয়োজন আমাদের দেশের জন্য। আর যখনি আমাদের পুল বা ব্রিজ যা কিছু করা হয় আমি সবসময় এটাই লক্ষ্য রাখি এবং একনেকে সবসময় নির্দেশনা দেই পর্যাপ্ত পরিমাণে কালভার্ট এবং ব্রিজ করে দেওয়া। যাতে পানির গতিটা কখনো না থামে। আমাদের নদীর গতি এবং প্রতি বর্ষার পর নদীর তলদেশে মাটির চরিত্রটা কিন্তু বদলে যায়। যমুনাতে একেবারে চুলের বেণী যেভাবে ওইভাবে হয় এবং প্রতিবারই বদলায়। ঠিক তেমন হয় আমাদের পদ্মা নদীতেও। কাজেই এগুলো মাথায় রেখেই আমাদের প্ল্যান করতে হবে। আমাদের বাংলাদেশের অবস্থাটা কিন্তু অন্যান্য দেশের মতো না। আমাদের দেশের অবস্থাটা কিন্তু একটু ভিন্ন। তাই এই ভিন্নতা মাথায় রেখেই আমাদের পরিকল্পনা নেয়া এবং সেভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশটাকে চিনতে হবে জানতে হবে। আর বাংলাদেশের এক এক এলাকা কিন্তু একেক রকম। সেটাও মাথায় রাখতে হবে এবং সেভাবে কাজ করতে হবে।
এসএম/এএজেড