৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে হাট-বাজার আইনের খসড়া অনুমোদন
অবৈধভাবে হাটবাজারের জমি দখলে রাখলে বা দখল করলে ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রেখে সরকার হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন ২০২২, এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। একইসঙ্গে ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০২২ ও ভূমি সংস্কার আইন, ২০২২ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনের খসড়া তিনটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
এছাড়া মন্ত্রিসভা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতি, বাংলাদেশ-২০২২ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম নিয়মিত সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সংবাদ ব্রিফিং এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সরকারের অনুমতি ছাড়া কোথাও কোন হাটবাজার বসানো যাবে না। যদি কেউ কোথাও কোন হাটবাজার বসান তাহলে সেটি সরকারের খাস জায়গায় চলে যাবে। হাটবাজার বসাতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগবে। হাটবাজারের কোন জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না। তবে জেলা প্রশাসক অস্থায়ীভাবে সর্বোচ্চ আধা শতাংশ জমি চান্দিনা ভিটি হিসেবে এক সনা ইজারা দিতে পারবেন।
কেউ যদি বিনা অনুমতিতে হাটবাজার বসায় সরকার আইন অনুযায়ি সেই বাজার অধিগ্রহণ করে নিবে খাস জমিতে রূপান্তরিত হবে। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় সরকার, স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাতে বলা হয়েছে।
সাপ্তাহিক হাট সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কেন হাট বসাচ্ছেন, এ ব্যাপারে আগে সতর্ক করতে হবে। হঠাৎ করে গিয়ে তো আপনি অধিগ্রহণ করা যাবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনান, আইনে বলা হয়েছে যে স্থানে জনসাধারণ কর্তৃক দৈনিক অথবা সপ্তাহের কোন একদিন কৃষিপণ্য. ফলমুল, পশু, হাস-মুরগি, ডিম, মাছ, মাংস দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় পণ্য অথবা অন্য যে কোন ধরণের পানীয় পণ্য, শিল্পজাত দ্রব্যাদি, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ ক্রয়-বিক্রয় হবে বা সেই স্থানে এসব পণ্য বিক্রয়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত দোকানও এ আইনের অর্ন্তভূক্ত।
আনোয়ারুল ইসলাম প্রস্তাবিত এই আইনে শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, হাট বাজারের সরকারি জমি কেউ অবৈধ দখলে রাখলে, পূর্বানুমতি ছাড়া, হাটবাজারের খাসজমিতে কোন স্থাপনা নির্মাণ করলে বা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করলে অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন।
ভূমি সংস্কার আইন
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ১৯৮৪ সালের একটি অর্ডিন্যান্সকে আইনে পরিণত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইনে বলা হয়েছে কৃষি জমির পরিমান ৬০ বিঘা, কিন্তু এই আইনে বলা হয়েছে যদি রপ্তানিযোগ্য কৃষি পণ্য বা অন্যকোন কৃষিপণ্য জাতের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প হয় তাহলে সেক্ষেত্রে এই ৬০ বিঘা প্রযোজ্য হবে না।
পল্লী এলাকায় বাস্তুভিটাদের জন্য যদি কোন খাস জমি পাওয়া যায় তাহলে সরকার ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবার বা ভূমিহীন কৃষক বা শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লিজ দিবে। তবে কোন অবস্থাতেই কোন ব্যক্তিকে পাঁচ শতাংশের বেশি লিজ দেওয়া যাবে না।
বর্গার বিষয়ে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, আগে বর্গার বিষয়ে কিছু বলা ছিল না। এখন প্রতিটি বর্গার ক্ষেত্রে অবশ্যই পাঁচ বছরের চুক্তি করতে হবে। অর্থাৎ আপনার জমি আছে, সেটি বর্গা দিবেন। সেক্ষেত্রে চুক্তি করে নিতে হবে। কোন কারণে যদি কোন বর্গাদার মারা যান, তাহলে চুক্তি অনুযায়ি তার ওয়ারিশানরা চুক্তির বাস্তবায়ন করবেন। পাঁচ বছর পর পর এটি রিভিউ করা যাবে।
তিনি জানান, এই আইনের আদেশ লঙ্গন করলে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতির অনুমোদন
এ নীতিমালা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এসডিজি’র চাহিদা অনুযায়ি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যনীতি, বাংলাদেশ-২০২২ এর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
তিনি বলেন, আমাদের যে সার্ভে আছে তার তথ্য অনুযায়ি, প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে প্রায় ১৮ দশমিক সাত শতাংশ এবং শিশু–কিশোরিদের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ দশমিক ছয় শতাংশের মানসিক সমস্যা রয়েছে। সুতরাং এত বড় একটা জনগোষ্ঠিকে এড্রেস করা দরকার। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা ও সেবা কিভাবে সহজ করা যায় এবং মাঠ পর্যায়ে কিভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়, দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞদের মতামত নিয়ে তাদেরকে কিভাবে সমাজের পার্ট হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা যায় সে জন্যই এই জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
এনএইচবি/