যাদের বিশ্বাস করেছিলাম তারাই আমাকে রেখে চলে গেল: প্রধানমন্ত্রী
সব হারিয়ে যখন দেশে ফিরেছিলাম তখন একটাই লক্ষ্য ছিল এদেশের দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। ১৯৮২ সালের ১৭ মে যখন দেশে ফিরে এসেছিলাম আপন জন কাউকে পাইনি। পেয়েছিলাম এদেশের জনগণকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো ১৯৮২ সালেই আমাদের পার্টিটা ভাগ হয়ে যায়। যেটা খুব অনাকাঙ্খিত ছিল। ভাগ করল তারাই যাদের উপর সব থেকে বেশি ভরসা করেছিলাম এবং প্রবাসে থেকে যাদের সব থেকে বেশি সংগঠন তৈরি করতে সহযোগিতা করেছিলাম।
দুর্ভাগ্য যাদের সব থেকে বেশি সহযোগিতা করেছিলাম আমি আসার পর তারাই আমার সাথে বেঈমানি করে চলে গেল। যেহেতু আমি সকল স্তরের নেতাকর্মীদের বলেছিলাম তাদের সাথে থাকতে কাজেই ভালো অংশ নিয়েই বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তার পর থেকে যাত্রা শুরু হয় দলটাকে সুসংগঠতি করা এভাবেই নিজের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কথা স্মরণ করলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বুধবার (১৮ মে) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ফেরার পর বার বার ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। একটাই লক্ষ্য ছিল জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরে দেওয়া। যে ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি রাখা হয়েছিল ক্যান্টমেন্ট থেকে সেই ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দেওয়া। অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি সেটা আমরা করতে সমর্থ হয়েছি। জনগণের ভোট চুরি করলে জনগণ সেটা মেনে নেয় না, এটা হলো বাস্তবতা।
নির্বাচন নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা যদি ৭৫ এর পর প্রতিটি নির্বাচন দেখি সেখানে ভোটের বাক্স ছিনতাই, সিল মেরে ভোটের বাক্স ভরা, প্রতিপক্ষকে আঘাত করা। খুব বেশি দূর যাওয়া লাগবে না ২০০১ সালের নির্বাচন দেখলেই দেখা যাবে। আন্দোলন সংগ্রাম করে গণতন্ত্র ফিরে এনেছিলাম ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী খালেদা জিয়া প্রহসনমূলক নির্বাচন করে। জনগণের ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া ঘোষণা দিল নিজেই প্রধানমন্ত্রী। জনগণের ভোট চুরি করলে জনগণ সেটা মেনে নেয় না, এটা হলো বাস্তবতা। যার ফলে তখন আন্দোলন হয় মাত্র দেড় মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারী নির্বাচন হয়েছিল ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়।
তিনি বলেন, সাত্তার সাহেব ১৯৮১ সালে রাষ্টপতি নির্বাচন। তখন জেনারেল এরশাদ ছিলেন সেনাপ্রধান। জেনারেল এরশাদ ঘোষণা দিয়েছিল ছাত্তার সাহেব তার প্রার্থী। তখন সাত্তার সাহেব ডায়লগের ডাক দিয়েছিলেন । আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা যাই। সেখানে বিএনপির অনেক বড় বড় নেতারা ছিল। আমাদের দল থেকে কয়েকটা কুলাঙ্গার যেমন ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম তারাও ছিল। সেদিন আমি বলেছিলাম সেনা প্রধানের প্রার্থী হতে যান বেশিদিন থাকতে পারবেন না। মির্জাফর বেঈমানী করেছিল সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে, সেও কিন্তু তিন মাস ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই। খন্দকার মোশতাক বেঈমানী করেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই। জিয়াউর রহমান সেও কিন্তু নিহত হয়েছে। তাকেও সিড়িও উপর গুলি খেয়ে মরতে হয়েছিল, মাথাটা নিচের দিকে ছিল। তার লাশও পায়িনি।
তিনি আরও বলেন, সেদিন আমি সাত্তার সাহেবকে যারা বানাচ্ছে তারাই ঘাড়টা মটকাবে এটা নিয়ম। আমাকে বিএনপি নেতা এটি বারী, বি চৌধুরী আমাদের ঢাকা সিটির নেতা হাসনাত বললেন ঘটনা কিন্তু সেটাই ঘটেছিল। ৩ মাস পুরা হয়নি। পরে এরশাদ সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে সাত্তার সাহেবকে বিদায় দিল। এভাবেই ক্ষমতা বদল হতো। আমরা মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারে সেটা আজ আমরা প্রমাণ করেছি। একজন জ্ঞানী লোক বলে ফেললেন পদ্মা সেতু দিয়ে যে রেল লাইন হচ্ছে। ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে। এই ঋণ শোধ হবে কি করে? দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ তো রেলে চড়বে না। তারা তো লঞ্চে যাতায়াত করে, তারা রেলে যাবে কেন? এই রেল ভায়াবেল হবে না। সেতুর কাজ হয়ে গেছে এখন সেতু নিয়ে কথা বলতে পারছে না। এখন রেলের কাজ চলছে রেলে নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আমার মনে হয় সকলে উনাকে চিনে রাখা উচিত।
রেলগাড়ী যখন চালু হবে তাকে একদিন রেলে নিয়ে চড়ানো উচিত। বড় বড় অর্থনীতিবিদ জ্ঞানী গুণি তারা এধরণের অর্বাচীনের মতো কথা বলে কিভাবে? মেগা প্রজেক্ট নিয়ে নাকি খুব ভুল করছি। তারা আয়েশে বসে থাকে আর আমার তৈরি করা সব টেলিভিশনে বসে কথা বলে। বিদ্যুৎ সরবরাহ করি সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি।
তখন বলা হলো এত টাকা দিয়ে স্যাটালাইট করে কি হবে? অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য কিছু করলেই তাদের গায়ে লাগে কেন? তাহলে তারা কি এখনও পাকিস্তানি সামরিক জান্তদের পদলেহনকারী খোষামোদী, তোষামোদীর দল। গালি দিই না। দেওয়ার রুচিও নাই। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে বাংলাদেশের উপর নির্যাতন করেছে, অগ্নি সংযোগ করেছে পোড়া মাটি নীতি নিয়ে বাংলাদেশ ধ্বংস করতে চেয়েছিল সেই পাকিস্তানীদের পদলেহনকারী সারমেয়র দল বাংলাদেশে এখনও জীবিত।
এএজেড