পদ্মা সেতুর একটি টাকাও ঋণ বা ধার করা হয়নি: প্রধানমন্ত্রী
পদ্মা সেতু এবং রেলসেতুর একটি টাকাও কারো কাছ থেকে ঋণ বা ধার করা হয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। এটা তাদের জানা উচিত। একেবারে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে আমরা তৈরি করছি। তারা অর্বাচীনের মতো মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, এটা গ্রহণ করা যায় না। মঙ্গলবার (১৭ মে) সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভার শুরুতে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি শেরে বাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে যুক্ত ছিলেন।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের একটা লক্ষ্যই ছিল। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটা আমরা নির্মাণ করেছি এবং এর বিদ্যুৎটা যখন আসবে সেটা আমার অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। অর্থনীতি আরও সচল হবে। চাঙ্গা হবে এবং এটা তো সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এটা নিয়ে এত সমালোচনা কেন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর এটা নিয়ে কারা কথা বলছেন? যারা এখন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কথা বলবে আমার মনে হয় তাদের বাড়ির বিদ্যুৎগুলি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। তারা জেনারেটর চালিয়ে চলুক? সেটিই ভাল হয়। তাহলে তারা বুঝবে বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে কিনা? নাকি এই গরীব মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ গেছে যেটা তাদের পছন্দ নয়? তারাই খাবেন তারাই ভালো থাকবেন আর আমার গরিব মানুষ মানুষগুলি ধুঁকে ধুঁকে মরবে, এটাই তারা চায়।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক কথা। তারপর আসলো পদ্মা সেতুর রেল লাইন ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে করার কি দরকার ছিল? কারা চড়বে…? আমি অপেক্ষা করছি, রেললাইন যখন চালু হবে তখন তারা চড়ে কিনা? এই মানুষগুলোকে আমার মনে হয় ধরে নিয়ে দেখানো দরকার হবে, রেল সেতুতে মানুষ চড়ে কি না?
পদ্মা একটি খরস্রোতা নদী জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদীর মধ্যে আমাজন এবং পদ্মা। সেই নদীর উপর রেললাইন দিচ্ছি। রেল লাইন নিয়েও তাদের সমালোচনা যে, এতো টাকা কেন খরচ করা হলো? কিন্তু এই একটা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের যে আমাদের জেলাগুলি-অঞ্চলগুলি আছে সেখানে যে অর্থনীতির গতিশীলতা আসবে, এই মানুষগুলোর চলাচল, পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে। সেটা তারা একবার ভেবে দেখেছে?
মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়। আর এখন জেলে করে তারা চলে আসবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। এই রেলসেতু তো মংলা পোর্ট পর্যন্তই সংযুক্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে পায়রা পোর্ট যখন আমরা করবো, পায়রা পোর্ট পরযন্ত যাতে সংযুক্ত হয় সেই ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। কিন্তু সেটার এই মুহূর্তে খুব বেশি প্রয়োজন নেই বলে আমরা একটু ধীর গতিতে যাচ্ছি।
‘‘কাজেই এখানেও তাদের সেই সমালোচনা? ৪০ হাজার কোটি নাকি আমরা ধার করেছি? এখানে যারা এই কথাগুলো বলছে তাদের স্পষ্ট বলতে চাই, পদ্মা সেতুর একটি টাকাও কারো কাছ থেকে আমরা ঋণ করিনি, ধার করিনি। এটা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। এটা তাদের জানা উচিত। পদ্মা সেতু আমরা করছি আমাদের নিজেদের অর্থায়নে। একেবারে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে আমরা তৈরি করছি। তারা অর্বাচীনের মত একটা কথা বলবে আর মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, এটা গ্রহণ করা যায় না” বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।
এমনকি আমরা যখন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করলাম, তখনো তারা বলছে এটার কি দরকার ছিল? যাই করবেন তাতেই বলবে, এটার কি দরকার ছিল। তাদের জন্য দরকার না থাকতে পারে, কিন্তু আমার দেশের মানুষের জন্য দরকার আছে।
তবে আমি মনে করি, আমাদের করা সকল সুযোগ-সবিধা ব্যবহারও করবেন আবার সমালোচনাও করে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন। এটা বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু জানে। আর বাংলাদেশে কতগুলি নাম আর চরিত্র আছে, এদেরকে আমরা চিনি। এজন্য দেশবাসীকে নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এসএম/এএজেড