খাদ্যশস্যসহ সবকিছু ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে খাদ্যশস্যসহ সবকিছু ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদেরকে পর্যালোচনা করা দরকার। কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেব, সেগুলো নির্দিষ্ট করা দরকার।’
সোমবার (১৬ মে) সকালে গণভবন থেকে ভার্চ্যুযালি যুক্ত হয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা বিষয়ক দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন-২০২২ এ সরকার প্রধান এ কথা বলেন।
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যা আছে। সবগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সবাইকে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। পানি-বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। খাদ্যশস্য ব্যবহারে প্রতিটি ক্ষেত্রে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ আমরা জানি কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে বা এর একটা ধাক্কা সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। যার ফলে মানুষের অনেক কষ্ট হবে। কাজেই সেটা যেন আমাদের দেশের না হয়, সেজন্য আমাদের দেশের মানুষ প্রতিটি মানুষ প্রতিটি পরিবার সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’
তিনি বলেন, যেগুলো আমরা ইতোমধ্যে অর্জন করেছি সেগুলোকে ধরে রাখা। আগামীতে আমরা কী কী বিষয় অর্জন করব সেটা ঠিক করা। এখনকার প্রেক্ষিত যথেষ্ট পরিবর্তন হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী একটা অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে। এমনকি খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে যেহেতু জমি আছে মানুষ আছে। আমি এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। দেশবাসীকে বলব প্রত্যেকে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে নিজের খাদ্য উৎপাদন করা, নিজের খাদ্য সাশ্রয় করা এবং নিজের খাদ্য ব্যবহার করা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে আমরা যে পর্যালোচনা করব সেখানেও ক্ষেত্রগুলোর সুনির্দিষ্টভাবে নিতে হবে। কোনোরকম অপচয় যেন না হয়। অপচয় পরিহার করে সুষ্ঠু অর্জন যেন আমরা করতে পারি বা বাস্তবায়ন করতে পারে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। সেক্ষেত্রে যে সমস্ত পদক্ষেপগুলো আশু করণীয় বা এই মুহূর্তে করতে হবে সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। বা যেগুলো এখন প্রয়োজন নাই বা দীর্ঘমেয়াদি সেগুলো বেছে নিতে। এভাবে যদি পরিকল্পিতভাবে এগোতে পারি তাহলে আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নকে আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একেবারে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা এটাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ এসডিজিকে কেবল বৈশ্বিক উন্নয়নের ধারণা হিসেবে গ্রহণ করেনি বরং বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রাকে দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিজের উপযোগী করে প্রণয়ন করার কার্যক্রম শুরু করেছে যা এসডিজি স্থানীয়করণ।
এসডিজি লোকালাইজেশন করণ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এই কার্যক্রমের আওতায় ১৭টি অভিষ্ঠ হতে ৩৯টি সূচকে বাংলাদেশ এসডিজি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা বাস্তবায়ন বাস্তবতা বিবেচনায় একটি করে অতিরিক্ত সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা যায় এই অগ্রাধিকার তালিকায় অনুযায়ী জেলা-উপজেলায় এবং স্থানীয় পর্যায়ের সকল সরকারি দপ্তরে দ্রুততা এবং সফলতার সঙ্গে এসডিজি পরিবীক্ষণ এবং বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। দেশের চলমান উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে এই দুই বছরের এসডিজির গতি কিছুটা মন্থর হয়েছে। আমরা আমাদের সময়কে সর্বোত্তম ব্যবহার করে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছি এবং যাব। আমরা অর্জন করতে পারব বিশ্বাস করি। সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজ বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে অর্থনীতি আবারো ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসছে।’
নির্দিষ্ট সময় এসডিজির পথ-পরিক্রমা করা কঠিন, তবে আমি বিশ্বাস করি সঠিক এবং উদ্ভাবনী পরিকল্পনা এবং কার্যকর পরিবীক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
এসএম/এমএমএ/