ঢাকা-যশোর রেলপথের অগ্রগতি ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ
আগামী মাসে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে পদ্মা সেতু। কিন্তু সেতুতে কবে নাগাদ রেলপথ চালু হবে বা বহুল প্রতিক্ষীত ট্রেন চলবে তা এখনও অনিশ্চিত। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেতু কর্তৃপক্ষ তাদের রেল অংশের কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পর পরই তারা পদ্মা সেতুতে রেল লাইনের নির্মাণ কাজে হাত দিতে পারবেন।
তবে পদ্মা সেতুতে রেল লাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলেও ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলতে অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। আর ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত বাকি অংশের কাজ শেষ করে রেল ট্র্যাকে ট্রেন চলতে অপেক্ষা করতে হবে আরও দীর্ঘ সময়।
রেলপথ মন্ত্রণালয় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মূল রেলপথ এবং এর সঙ্গে লুপ ও সাইডিং ৪৩ দেশমিক ২২ কিলোমিটার ও ডাবল লাইন তিন কিলোমিটারসহ সর্বমোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে।
এই প্রকল্প সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতাভুক্ত হয় ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে। প্রকল্পটিকে তিন ভাগে ভাগ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের কাজ সমাপ্তের উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ভাগে ঢাকা-মাওয়া সেকশনের কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে, মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনের কাজ ২০২২ সালে এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত সেকশনের কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সমাপ্তের উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও সর্বশেষ অনুমোদিত আরডিপিপি অনুযায়ি এই প্রকল্পের মেয়াদ হচ্ছে ১ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত। রেল কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে।
প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার এই প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। ঋণচুক্তির আওতায় চায়না এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়ন হচ্ছে দুই হাজার ৬৬৭ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। টাকার অংকে অর্থের পরিমান হচ্ছে ২১ হাজার ৭৪৯ কোটি পাঁচ লাখ টাকা।
প্রকল্পের কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে রবিবার রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সরেজমিন ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে নির্মাণাধীন ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
এই সময় রেলপথ মন্ত্রী মাওয়ায় প্রকল্পের এরিয়া অফিসে এক প্রেস বিফ্রিং-এ জানান, ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত রেলপথের কাজের অগ্রগতি হচ্ছে ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ। মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অগ্রগতি হচ্ছে ৭৮ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি পর্যন্ত ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এই প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হচ্ছে ৪৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, জুনে সেতু চালু হওয়ার পর আগামী জুলাই মাসে সেতু কর্তৃপক্ষ সেতুটি বুঝিয়ে দেবে রেল কর্তৃপক্ষকে রেলের কাজ করার জন্য। তারপরই সেতুতে রেল লাইন নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে।
তবে রেলপথ মন্ত্রী মাওয়া অংশ পরিদর্শন শেষে গিয়েছিলেন নির্মাণাধীন ভাঙ্গা জংশন পরির্দশনে। তার আগে তিনি আড়িয়াল খাঁ নদ’র উপর আড়িয়াল খাঁ সেতু ও রেলপথ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। কিন্তু নির্মাণাধীন ভাঙ্গা জংশন-এ গিয়ে মন্ত্রী দেখতে পান কাজের অগ্রগতি অনেকটা ধীর। এ নিয়ে তিনি কিছুটা অসেন্তাষ প্রকাশ করেন।
প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাকে জানান, স্টেশনের নির্মাণ কাজ এক বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এসময় মন্ত্রীকে বলতে শুনা যায় আপনারা তো দেড় বছরেও কাজ শেষ করতে পারবেন না।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভাঙ্গা জংশনের নির্মাণ কাজ যে পর্যায়ে আছে সেটি শেষ হতে অন্তত আরও দুই বছর সময় লাগবে।
এদিকে সরেজিমন দেখা গেছে, ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজের সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত। এই অংশে ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে শুরু করে কেরানীগঞ্জ হয়ে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত এলিভেটেড রেলপথ নির্মাণের কাজ অনেক দূর শেষ হয়ে গেছে। কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর উপর রেল সেতু নির্মাণের কাজের অগ্রগতিও সন্তোষজনক। ইতোমধ্যে এই সেতুর পাঁচটি পিয়ারের মধ্যে দুটি পিয়ারের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এগুলোর উপর স্প্যানও বসানো হয়েছে। এখন চলছে ৯৪, ৯৫ ও ৯৬ নম্বর পিয়ারের কাজ। এই সেতুতে মোট পাঁচটি পিয়ারের উপর চারটি স্প্যান বসবে।
একইভাবে ধলেশ্বরী মূল সেতুতে ছয়টা পিয়ারের মধ্যে চারটি স্প্যান বসবে। ইতোমধ্যে তিনটি পিয়ার নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি তিনটির কাজ চলছে।
এলিভেটেড এই রেলপথের পলাশপুরে ২৯৫ নম্বর পিয়ারের উপর উঠে দেখা গেছে রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। রেল ট্র্যাকও বসানো হয়েছে।
মাওয়া স্টেশনটি নির্মাণ হচ্ছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রেখে। থাকছে সুপ্রশস্ত গাড়ি পাকিং এর ব্যবস্থা। একটি এলিভেটেড প্লাটফর্মও থাকবে এই স্টেশনে। রাস্তার অন্যপ্রান্ত থেকে যে যাত্রীরা সহজে স্টেশনে আসতে পারেন সে জন্য থাকবে আন্ডারপাস।
এনএইচবি/আরএ/