৩৪ মামলায় পলাতক ছিলেন পি কে হালদার
ভারতের গ্রেপ্তার হওয়া গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ৯৩৩ কোটি টাকার মালিক। এসবই অবৈধ সম্পদ।
শুধুমাত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকেই আত্মসাত করেছেন ৫২৩ কোটি। এসব অভিযোগে দায়ের হওয়া ৩৪ টি মামলা মাথায় নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পলাতক ছিলেন পি কে হালদার।
পি কে হালদার ৯৩৩ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মাত্র ১০ বছরে। আদালতে জমা দেওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার অভিযোগপত্রেই এমনটা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ পর্যন্ত পি কে হালদারের সহযোগী ৮৩ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। প্রায় ৯৩৩ কোটি টাকার সমমূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট’সহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।
৬৪ জন আসামি ও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ১৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ১১ জন আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, নামে-বেনামে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি-ফ্ল্যাট-হোটেল কিনেছেন পি কে হালদার। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তিনি এই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। অথচ তার বৈধ সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১২ কোটি টাকা। নিকটাত্মীয়দের নামেও বিপুল সম্পত্তি রয়েছে তার।
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ৩৫ মামলার মধ্যে আত্মসাতের পাশাপাশি টাকা পাচারের মামলাও আছে। কানাডায় ৮০ কোটি টাকা পাচার করেছেন পি কে হালদার।
যেভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হন পি কে হালদার
আর্থিক মূলত জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন পিরোজপুরের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। তিনি দেশের ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির নামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নেন।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, এই বিপুল অর্থ ফেরত না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান চারটি গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো-ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
পি কে হালদারের একটি কৌশল ছিল এসব প্রতিষ্ঠানের টাকা বের করার আগে শেয়ার কেনা। তারপর এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিতেন তিনি। এই বহুল আলোচিত আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয় ২০২০ সালের শুরুতে। তার আগেই ২০১৯ সালের শেষ দিকে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান।
পলাতক থাকা অবস্থাতেই ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
পলাতক থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। পি কে হালদারের মামাতো ভাই শঙ্খ ব্যাপারী, ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা ও অবন্তিকা বড়াল এই মামলায় গ্রেপ্তার হন এবং আদালতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পি কে হালদারের সঙ্গে সঙ্গে তার মা, ভাইসহ ১০ জন এখনো পলাতক রয়েছেন। পি কে হালদারকে অবশেষে আজ গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে ভারতে।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন পি কে হালদার। এই বিপুল জমি তিনি নামে-বেনামে কিনেছেন। এই জমির বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। এর মধ্যে নিজের নামে তিনি জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ।
নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন করেছেন পি কে হালদার। এটির দাম দাম ১২ কোটি টাকা। আর পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন। যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা।
পি কে হালদার তার কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে ২ একর জমির ওপর আটতলা হোটেল নির্মাণ করেছেন। হোটেলটির আর্থিক মূল্য এখন ২৪০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী এবং অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন পি কে হালদার, যার বাজারমূল্য ১৬৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডিয়ান ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদক বলছে, ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ৮০ কোটি টাকা পাচার করেন পি কে হালদার।
আরইউ/এমএমএ/