দলীয় নেতারাই হচ্ছেন জেলা পরিষদের প্রশাসক!
দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে প্রশাসক হিসেবে আমলা নয়, রাজনৈতিক নেতারাই বসছেন। এটা প্রায় চূড়ান্ত। তালিকাও প্রস্তুত। এই সপ্তাহেই পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্য়ায়ের নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই স্থানীয় সরকার বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় সরকার গত ১৭ এপ্রিল সারাদেশে তিন পার্বত্য জেলা বাদে বাকি ৬১টি জেলা পরিষদের কার্যক্রম ভেঙে দেয়। অর্থাৎ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয় য়ে, জেলা পরিষদ গঠনের প্রথম সভার তারিখ থেকে মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় স্থানীয় সরকার আইন (জেলা পরিষদ আইন ২০০০) (সংশোধিত) ২০২২ এর ধারা ৫ অনুযায়ী দেশের ৬১টি জেলা পরিষদসমূহ বিলুপ্ত করা হয়েছে।
একই আদেশে বলা হয়, আইনের ধারা ৮২ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগের পূর্ব পর্যন্ত উক্ত আইনের ধারা ৭৫-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে দায়িত্ব অর্পণ করা হলো।
আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদের পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত জেলা পরিষদে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার একজন প্রশাসক নিয়োগ দেবে। তিনি রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক বা সরকারি আমলা যে কেউ হতে পারেন।
তবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকার পূর্বের ন্যায় মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞ এবং বঞ্চিত দলীয় নেতাদেরকে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তালিকাও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনই কেউ কোনো কথা বলতে নারাজ।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম রবিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আইন অনুযায়ী বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। আর রাজনৈতিক লোকজনের মধ্যেও বিশিষ্ট ব্যক্তি আছেন।
তিনি জানান, আশা করছি এই সপ্তাহেই যেকোনো দিন জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে। সেটা পাওয়া মাত্রই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ ও আরও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে প্রশাসকদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও সব মহলে গ্রহণযোগ্য নেতারা। যারা সরকারের এই ১৩ বছরে নানাভাবে বঞ্চিত ছিলেন বা হয়েছেন। এমপি-মন্ত্রী হতে পারেননি এমন নেতাদেরকেই জেলা পরিষদের প্রশাসকের তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকার ২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা পরিষদকে সচল করে এবং ওই বছরের ডিসেম্বর মাসেই জেলা পর্যায়ে এমপি-মন্ত্রী হতে পারেননি দলীয় এমন নেতাদেরকে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। যাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং হুইপ ও প্রবীণ নেতা।
তারা প্রায় পাঁচ বছর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত জেলা পরিষদ নির্বাচিত চেয়ারম্যান পায়।
তাদের মেয়াদ পূর্ণ হলেও নির্বাচন কমিশন জেলা পরিষদের পরবর্তী নির্বাচন আর করতে পারেনি। যার ফলে সরকার স্থানীয় সরকার আইন (জেলা পরিষদ) (সংশোধন) আইন ২০২২ গত ১৩ এপ্রিল জাতীয় সংসদে পাস করে। এর চার দিন পর ১৭ এপ্রিল নির্বাচিত জেলা পরিষদ ভেঙে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ তারপর থেকে গত কয়েকদিন ধরেই শূন্য রয়েছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ।
এনএইচবি/এমএমএ/