ভবন নির্মাণে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
যেকোনো প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের আগে জলাধার রক্ষা ও আগুন নির্বাপণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে দেশের বিভিন্ন স্থানে নবনির্মিত ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, স্থপতি ও প্রকৌশলীদের প্রতি এ আহ্বান জানান সরকার প্রধান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যখন কোনো প্রকল্পের নকশা করেন প্রত্যেককে একটা কথা মনে রাখতে হবে, যে জায়গায় প্রজেক্ট সেই জায়গায় বা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক ব্যবস্থা আছে কি-না, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি যদি কখনও আগুন লাগে সেটা নেভাবার জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় কি-না সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। জলাধারগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে অজস্র খাল-বিল পুকুরের জায়গা, বাংলাদেশটাই তো এরকম। কাজেই ভরাট করার আগে কথাটা মাথায় রাখা উচিত ছিল। অনেক সময় আগুন লাগলে কাছাকাছি পানি পাওয়া যায় না। পানি নিতে পারে না বলে আগুন তো আর বসে থাকে না। সেটা ফাইট করতে হলে যে জিনিস দরকার সেটাই যদি না পাওয়া যায় তাহলে ফায়ার ফাইটার কীভাবে কাজ করবে? তাদেরও তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। সেজন্য আমার অনুরোধ থাকবে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ,স্থপতি, প্রকৌশলী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যখন কোনো পরিকল্পনা করবে তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে ফায়ার সার্ভিসের জন্য যেন বিশেষ সুবিধা থাকে। অর্থাৎ তাদের ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা এবং পানি পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ভবনে আগুন লাগলে পানির প্রাপ্যতা যেন নিশ্চিত হয় সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। জলাধার ও বৃষ্টির পানি যাতে সংরক্ষণ করা থাকে সেই ব্যবস্থাটাও নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখন মাত্র ২০ তলা পর্যন্ত ফায়ার ফাইটিংয়ের সব ক্ষমতা আছে। কিন্তু সেখানে আমি দেখতে পাই কেউ হয়তো শত তলা উঁচু ভবন করবে কেউ ৩০ বা ৪০ তলা নানা রকম পরিকল্পনা করে বসে আছে। তাদের চিন্তা করতে হবে সেখানে যদি কখনো কোনো দুর্ঘটনা দেখা দেয় সেখান উদ্ধার কাজ করার মতো সক্ষমতা আমাদের কতটুকু আছে? সেই চিন্তাটা করেই পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। অর্থাৎ প্রতিটি বিল্ডিং, স্কুল, কলেজ, আদালত, শপিং মল, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল বিভিন্ন শিল্প-কারখানাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা একান্তভাবেই জরুরি। সেটা যেমন করতে হবে আবার আশেপাশে যেন জলাধার থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এটা নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই একান্ত দরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অবশ্যই হতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষকে এ ব্যাপারে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। ফায়ার ফাইটাররা যাতে আধুনিক প্রশিক্ষিত হয়, আন্তর্জাতিক মানের হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছি। এখানেও একটা দক্ষ জনশক্তি দরকার। ইতোমধ্যে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই কাজও এগিয়ে চলছে।
ফায়ার স্টেশনের অবস্থা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার সময় মাত্র ২০৪টি স্টেশন ছিল। অথচ জনসংখ্যা বেড়ে গেছে ১৬ কোটির উপরে, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছিলাম যে প্রত্যেকটা উপজেলা অন্তত একটি করে ফায়ার স্টেশন হবে। এ ছাড়া বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ফায়ার স্টেশন গড়ে তুলব। এখন প্রায় ৪৫৬ ফায়ার স্টেশন আমাদের আছে। আজকে আরও ৪০টি ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন করা হচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে আরও ৫৫টি তৈরি হয়ে যাবে।
এসএম/এসএন