দেশে গ্যাসের মজুত শেষ হতে পারে ৫ বছরের মধ্যে
প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ার অষ্টম বৃহত্তম। বর্তমানে যে হারে উৎপাদন হচ্ছে সে হার অব্যাহত থাকলে এ গ্যাসের মজুত পাঁচ বছরেরও কম সময়ে শেষ হয়ে যেতে পারে। আর ২০২৫ সাল নাগাদ গৃহস্থালির গ্যাসের সরবরাহ ২৫ শতাংশ হ্রাস পাবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রকি মাউন্টেন ইনস্টিটিউটের (আরএমআই) ‘বাংলাদেশ অ্যাট এন এনার্জি ক্রসরোডস’ শীর্ষক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস গ্যাস। আর গ্যাসের ওপর অব্যাহত নির্ভরশীলতার কারণে জলবায়ু, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়তে পারে দেশটি। এদিকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের শতাধিক দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস ৩০ শতাংশ কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশ যে পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন করে, তার চেয়ে বেশি খরচ করে বলে প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে। ফলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবহৃত গ্যাসের ৭০ শতাংশই আসে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে।
২০২০ সালে বাংলাদেশ ৪৩ লাখ মেট্রিক টনের বেশি এলএনজি আমদানি করেছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় ২০১৯ সালের তুলনায় ২০৪০ সাল নাগাদ এলএনজি আমদানি ৫০ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ২০৪০ সাল নাগাদ আমদানিকৃত এলএনজি থেকে বছরে ৩৯০-৯০০ মেট্রিক টন কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমন হতে পারে; যা ১০০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট নির্গমনের চেয়েও বেশি।
মিথেনের একটি প্রধান উৎস এলএনজি। আগামী ২০ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে মিথেন গ্যাসটি কার্বন ডাই–অক্সাইডের তুলনায় ৮৪ গুণ বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
আরএমআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহযোগী ও প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক ফ্রান্সেস রিউল্যান্ড বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে মিথেন অনেক বেশি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ হলো, মিথেন নির্গমন জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি–নির্ভরতার ঝুঁকি অনেক বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে।
ফ্রান্সেস রিউল্যান্ড আরও বলেন, গ্যাসের ওপর নির্ভরতার সত্যিকার ক্ষতিকর দিকগুলো অনুধাবন করা জরুরি। অনেক দেশ আজকাল ক্লিন এনার্জির (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) দিকে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এটি জলবায়ু ও অর্থনীতির জন্য বেশি নিরাপদ। এ ছাড়া জনগণের স্বাস্থ্যের জন্যও অনুকূল ভূমিকা রাখে।
প্রতিবেদনটির বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, ২০৪০ সাল নাগাদ এলএনজি উৎপাদন ও পরিবহনের কারণে সৃষ্ট কার্বন ডাই–অক্সাইডের নির্গমন বাংলাদেশে এ গ্যাসের মোট নির্গমনের ৯৫ শতাংশের জন্য দায়ী থাকবে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়া ও এলএনজি আমদানির ওপর বেশি নির্ভরতার কারণে ঘটবে এটি।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ চুক্তি অনুমোদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
আরএমআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিথেন গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাস করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে দেশটির সরকার নির্ধারিত জ্বালানি, জলবায়ু এবং পরিবেশগত লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে কি না।
প্রাকৃতিক গ্যাস ও জীবাশ্ম জ্বালানি–নির্ভরতা থেকে সরে আসা একটি দেশের স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই সবচেয়ে খারাপ বায়ুদূষণের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে অবস্থান করছে। বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যের ক্ষতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
টিটি/