ঈদে রেলের আগাম টিকিট
কমলাপুরে মানুষের দুর্ভোগ-ভোগান্তি
ঈদ মানে আনন্দ। ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে ঈদের সেই আনন্দ উপভোগ করতে, মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটে যান লাখ লাখ মানুষ। মানুষের এই গ্রামে ফেরার যুদ্ধটা শুরু হয় ঈদের দিন দশেক আগে থেকেই। ট্রেন, বাস ও লঞ্চের টিকিট সংগ্রহ করতে মানুষকে কঠিন যুদ্ধ করতে হয়। করোনা মহামারির কারণে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের সেই যুদ্ধ দুই বছর বন্ধ থাকলেও আগামী ঈদকে সামনে রেখে আজ থেকে আবার শুরু হয়েছে।
টিকিট সংগ্রহের এই যুদ্ধটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। কারণ নিরাপদ ভ্রমণের জন্য রেলওয়েকেই পছন্দ করেন বেশিরভাগ মানুষ। আগামী ঈদের আগাম টিকিট দেওয়া শুরু হয়েছে আজ শনিবার (২৩ এপ্রিল) থেকে। সেই টিকিট সংগ্রহ করতে শত শত মানুষ শুক্রবার থেকেই অপেক্ষা করছেন কমলাপুরসহ নগরীর আরও চারটি স্টেশনে।
ঢাকাপ্রকাশের এই প্রতিবেদক শনিবার খুব ভোরে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার অন্তত আড়াই ঘণ্টা আগে গিয়েছিলেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। সরেজমিন দেখে এসেছেন টিকিট সংগ্রহে আসা মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা এবং তার সঙ্গে নানারকম ভোগান্তি।
ভোর সাড়ে পাঁচটায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় স্টেশনের পূর্ব পশ্চিম পাশের প্ল্যাটফর্মে টিকিটের জন্য হাজার হাজার মানুষের অপেক্ষা। কেউবা শুয়ে আছেন, কেউবা দাঁড়িয়ে কিংবা বসে বসে ঝিমুচ্ছেন। কেউ কেউ পত্রিকা পড়ছেন আবার কেউ কেউ হাতে থাকা মোবাইলে গেম খেলে ফেসবুক চালিয়ে কিংবা গান শুনে সময় পার করছেন। স্টেশনের টিকিট কাউন্টারগুলো খুলতে তখনো আড়াই ঘন্টা বাকি। যার ফলে তাদের অপেক্ষা আর শেষ হচ্ছে না।
টিকিট কিনতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কেউ কেউ এসেছেন শুক্রবার বিকেলে। কেউবা এসেছেন ইফতারের আগে। আবার কেউ কেউ এসেছেন রাত নয়টা দশটা বা বারোটার দিকে। এদের বেশিরভাগই রাতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে বসেই সেহরি খেয়েছেন। আবার অনেকে সেহরি খেয়েও এসেছেন। শুধুমাত্র ‘সোনার হরিণ’ বাড়ি ফেরার রেলের একটা টিকিট নিশ্চিত করার জন্যই তাদের এত কষ্ট এবং অপেক্ষা।
অনেকে জানালেন, মশার কামড় খেয়ে নির্ঘুম কাটিয়েছেন। তবুও যেন টিকিটটা পান সে জন্য কষ্ট করছেন। মাহবুব রহমান রাত দশটায় এসেছিলেন। সেই থেকে দাঁড়িয়ে বসে সময় পার করছেন। তিনি কুড়িগ্রামের টিকিট নিতে এমন কষ্ট করছেন। একইভাবে রাত ১০টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন সজীব আহমদ। কুড়িগ্রামের টিকিট নিবেন। বললেন, প্রথমে দাঁড়িয়েছিলাম পশ্চিম পাশের কাউন্টারের সামনে। রাত সাড়ে বারোটার সময় হঠাৎ করেই রেলওয়ে স্টেশন থেকে জানানো হলো কুড়িগ্রামের টিকিট দেওয়া হবে পশ্চিম পাশের কাউন্টারে। তারপর আবার হুড়োহুড়ি করে এই প্রান্তে আসা। ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এই একবার এই পাশে, আরেকবার ওই পাশে বলে আমাদেরকে একটা ভোগান্তিতে ফেলেছে। এতে করে অনেকেই হুড়োহুড়ি করে জায়গা বদল করতে গিয়ে হয়রানিতে পড়েন।
আশফাক আহমেদ যাবেন পার্বতীপুর। রাত সাড়ে তিনটায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে মোহাম্মদপুর থেকে এসেছেন। বললেন, সেহরি খেয়ে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। প্রথম দিকে আছি, আমার সামনে ৫০/৬০ জন আছেন। আশা করি টিকিট পাব।
বিপ্লব এসেছেন দিনাজপুরের টিকিট নিতে। রাত ১২টায় এসেছেন। তারপর থেকে কখনও দাঁড়িয়ে কখনও বসে রাত কাটিয়েছেন। এত কষ্টের কারণ শুধুই বাড়ি যাওয়ার একটা টিকিট।
একটা সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের কাজ করেন শিক্ষার্থী সাব্বির। যাবেন দিনাজপুর। জানালেন, বাড্ডা নতুনবাজার থেকে রাত দুটায় কমলাপুর এসেছেন। আসাটাও খুব ইজি ছিল না। তারপরও ঝুঁকি নিয়েছেন নিশ্চিন্তে বাড়ি যাওয়ার একটা টিকিটের জন্য। বললেন, আগে সবসময় অনলাইনে টিকিট কাটতাম। কিন্তু এবার মনে হলো অনলাইনে হেসেল হবে। এ কারণেই ঝুঁকি না নিয়ে সরাসরি কমলাপুর কাউন্টার চলে এলাম। পঞ্চগড়ের ট্রেনের টিকিট কিনতে সেহরি খেয়েই লাইনে দাড়িয়েছেন জিয়ারুল ইসলাম। বললেন, লাইনের প্রথমদিকে আছি। আশা করছি টিকিট পাব।
সাব্বি কায়সার বলছিলেন, খুবই খারাপ অবস্থা। এমনিতেই উত্তরবঙ্গের টিকিট পেতে অনেক ভোগান্তি। অনলাইনে টিকিট করতে গেলে অনেক সময় দেখা যায় টিকিট কনফার্ম হয়েছে। কিন্তু টাকা দিতে গেলে আর টিকিট পাওয়া যায় না। এজন্যই ফিরে এসে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিবছর ঈদের সময় টিকিট নিয়ে এই হাহাকার, ভোগান্তি, হয়রানি, এইটার স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত। ঈদে ঘরমুখো মানুষ কিভাবে সহজে টিকিট পাওয়া যায় সেই উদ্যোগ বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের ভাবা উচিত।
এসএ/