স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের উন্নতি চায়নি: প্রধানমন্ত্রী
মার্শাল ল'র মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারীরা স্বাধীনতাবিরোধী এবং জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাকারীদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মার্শাল ল'র মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা আসলে এ দেশের উন্নতি চায়নি, বরং স্বাধীনতাবিরোধী ও জাতির পিতাকে সপরিবারে যারা হত্যা করেছিল তাদেরই ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে তাদের মন মানসিকতা ছিল স্বাধীনতাবিরোধী। যে কারণে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, ‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পরপরই আমাদের লক্ষ্য ছিল একদিকে যেমন বিদেশি বিনিয়োগ কীভাবে বাড়ানো যায় অপরদিকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করব। সেভাবেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিই। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং শিল্প মন্ত্রণালেয়ের সমাপ্ত করা চারটি প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। অন্যদিকে যুক্ত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দারিদ্র্য বিমোচন করা, বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা এবং বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্য নিয়েই ইতোমধ্যে আমরা আমাদের লক্ষ্য স্থির করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ আমরা প্রণয়ন করেছি। যার ফলে বাংলাদেশে জলবায়ু অভিঘাত থেকে রক্ষা পাবে এবং উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে প্রজন্মের পর প্রজন্ম উন্নত সুন্দর জীবন যেন পায় তা নিশ্চিত করবে। ইতোমধ্যে আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে, সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে, খাদ্যের অভাব সৃষ্টি করেছে, তবে আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। যার ফলে করোনার সময় আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জনটা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা দেশব্যাপী পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রসার করছি। এখন পরিবেশ রক্ষা করাটাই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছি। শিল্প-কলকারখানা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্র পরিবেশবান্ধব যাতে হয় তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। গার্মেন্টস শিল্পের গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি সারা পৃথিবীতে ১০টার মধ্যে সাতটাই বাংলাদেশের। পরিবেশ-প্রতিবেশের প্রতি লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের সামনে আরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে, সেই দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে ঘোড়াশাল ও পলাশ দুটি পুরাতন ইউরিয়া সার কারখানার স্থলে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শক্তি সাশ্রয় এবং পরিবেশবান্ধব নতুন সার কারখানায় ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। নতুন এ সার কারখানায় দৈনিক ২৮০০ মেট্রিকটন এবং বার্ষিক ক্ষমতায় ১০ লাখ মেট্রিকটন দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে ১০ শতাংশ ইউরিয়া সার উৎপাদন বাড়ানো হবে। জাপান ও চীন সরকারের অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন হয়েছে। এজন্য তিনি দুই দেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, তারা আমাদের বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ১৫ হাজার ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা ৪৫ হাজার ৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে ২০২টি দেশ বা অঞ্চলের ৭৬৬টি পণ্য রপ্তানি করতে পারছি। যেহেতু প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত জনশক্তি যাতে গড়ে ওঠে তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, যে দেশকে সবসময় কিছু মানুষ মনে করতো যে এদেশে কোনো অগ্রগতি হবে না, কিন্তু আমরা অনেক অগ্রগতি করেছি। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি মাত্র ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। আমরা সেখানে ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছিলাম। আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। এই দেশ এগিয়ে যাবে।
এসএম/এসএন