আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের ঘোষণা দিয়ে মাঠে সরব হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট সঙ্গে বাসদসহ কিছু বাম দল। তাদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রায়ই দেখি আমাদের দেশে কিছু নেতা আছে তারা খুব আন্দোলনের জন্য ব্যস্ত। কী তাদের আন্দোলন এই সরকারকে হঠাতে হবে। কোন সরকার, আওয়ামী লীগ সরকার।
এখানে বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আমাদের মান্না সাহেব তার সঙ্গে ড. কামাল হোসেন সাহেবের একটা অংশ আর সে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাম দল-বাসদ আরও কারা কারা, তারা প্রায়ই বলে তারা নাকি সবাই এক হয়ে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে হঠাবে। ‘আমার প্রশ্ন অপরাধটা কী আওয়ামী লীগের’?
বুধবার (২০ এপ্রিল) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকার প্রধান এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি প্রায়ই শুনি বক্তৃতায় আমাদের দেশের কিছু নেতারা আছে দুঃসময়ে মানুষের পাশে কতটুকু দাঁড়িয়েছে সেটা আমি জানি না। করোনাকালীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছে কি না সেটার কিন্তু কোনো লক্ষণ আমরা দেখি নাই, তবে তারা আন্দোলনের জন্য খুব ব্যস্ত।
তিনি বলেন, আমরা যে সরকারে এসেছি ২০০৮ সালের নির্বাচনে। নির্বাচনে যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম সেই নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য আমরা স্থির করেছিলাম ২০২১ সাল পর্যন্ত। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই তারা আমাদেরকে বার বার ভোট দিয়েছে, ভোটে নির্বাচিত সরকার হয়ে ক্ষমতায় এসেছি। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার যা আমাদের লক্ষ্য আমরা সেটা অর্জন করেছি। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করেছি, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। এই সময় আমরা কি অর্জন করেছি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। আমার প্রশ্ন, এটা কি তাদের ভালো লাগেনি? সে কারণেই তারা এই সরকারকে হঠাতে চায়? বাংলাদেশ উন্নত দেশের মর্যাদা প্রাপ্ত। আমরা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করেছি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পেরেছি, কৃষকরা ভর্তুকির টাকাটা ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি পাচ্ছে। সারের দাম চার দফা কমিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। যেখানে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের ছিল। এই একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির পরিবর্তন করে দিয়েছে। জাতির পিতা ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়া রাখতে পারে নাই। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম কারও টাকা লাগবে না, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানাব, আজ সেটা আমরা তৈরি করে ফেলেছি। আজকে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দিয়েছি। ডিজিটাল সেন্টার করেছি। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক মানুষ ঘরে বসে বিদেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে, আর্থিক সচ্ছলতা পাচ্ছে। স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছি, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট প্রস্তুত করে যাচ্ছি, নিউক্লিয়ার প্লান্টের যুগে প্রবেশ করেছে। পায়রাতে ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করলাম। সেখানে ৮ মাস আগেই কাজ শেষ হয়েছে, তাতে প্রায় দেড়শ মিলিয়ন ইউএস ডলার সাশ্রয় করেছি অর্থাৎ প্রায় ৯০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছি। সময়ের আগেই আমরা শেষ করে ফেলেছি।’
অনেকে প্রশ্ন করেন এত বড় বড় প্রজেক্টের প্রয়োজনটা কী? শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে গেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতেই হবে। আমরা যে ৯০০ কোটি টাকার মতো বাঁচাতে পারলাম এ কথাটা কেউ বলে না। এটা বলতে বোধ হয় তাদের একটু কষ্টই হয়। একটা প্রজেক্টের টাকা বেশি লাগে, সেখানে টাকা সাশ্রয় হলো সময় কম লাগল এতে বোধ হয় আমাদের সমালোচকদের পছন্দ হয় না। সেটাই তারা চাচ্ছে, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রামপর্যায়ে রাস্তা, সেতু ও কালভার্ট করে দিয়েছি। এখন আর গ্রামে কাঁদা পায়ে হাটতে হয় না। রাস্তা ঘাট তৈরি করে দিয়েছি, বোধ হয় এটাও তাদের কাছে অপরাধ। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে যুবকরা বিনা জামানতে ২ লাখ টাকা নিয়ে কোনো একটা কর্মসংস্থান করতে পারে। যুবকরা যেন উদ্যাক্তা হতে পারে সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। বেকারত্ব থেকে যুব সমাজকে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। ২ কোটির মতো বৃত্তি, উপ-বৃত্তি দিচ্ছি। সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির টাকাও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিক করে চিকিৎসা সেবা জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়ে সারাদেশে বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ওষুধ মানুষকে দিচ্ছি। উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা বৃদ্ধি করে দিচ্ছি। এদেশের কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষ প্রত্যেকটা মানুষের ভাগ্য যাতে পরিবর্তন হয় তার ব্যবস্থা করেছি। আজকে দারিদ্র হ্রাস পেয়েছে। করোনাকালীন দারিদ্রের হার হ্রাস পেয়েছে। এই যে বহু কাজ আমরা করেছি আমার প্রশ্নটা হচ্ছে এই যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তৃণমূলের মানুষ, গ্রামের মানুষ উপকার পাচ্ছে, তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যটা কী? এই মানুষগুলোকে এই সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া। এটাই তো তাদের লক্ষ্য? এটাই তাদের উদ্দেশ্য? সেজন্যই তাদের শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে হবে? আমার প্রশ্ন তাদের কাছে অপরাধটা কী করেছি আমরা?’
সরকার প্রধান বলেন, ‘তারা লুটপাট করে খেয়েছে। মানুষ খুন করেছে। তাদের হাতে আমাদের হাজার হাজার নেতা কর্মী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে, চোখ হারিয়েছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষগুলোকে হত্যা করেছে। সেই ২০১৩ সালের কথা সকলের মনে আছে। ২০১৫ সালে কীভাবে মানুষ হত্যা করেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে যে অত্যাচার সারা দেশে করেছিল বিএনপি জামায়াত জোট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে অত্যাচার করেছিল ঠিক একইভাবে মেয়ের ধর্ষণ করা থেকে শুরু করে গণধর্ষণ থেকে মুক্তি পায় নাই। পুর্ণিমা ফাহিমাদে কত নাম সেই সমস্ত দিনের কথা মানুষ ভুলে যায় কীভাবে? সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোল মডেল, তখন আমাদের দেশের কিছু মানুষ বিদেশের কাছে নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ব্যস্ত। সরকার উৎখাতে ব্যস্ত। তাদের কর্মসূচি জনগণের কাছে তুলে ধরুক। তারা দেশের মানুষের জন্য কী করবে? আমরা দেশের মানুষের জন্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তারেই ভিত্তিতে অষ্টম পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করে সেটিও বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ শতবর্ষে কীভাবে উন্নত থাকে উন্নতির পথে এগিয়ে যায় সেই পরিকল্পনাও আমরা তৈরি করে দিয়েছি। এটা অনুসরণ করে চললে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করেছি আরও করব।’
এসএম/এমএমএ/