নির্বাচনের সড়কটা মসৃণ নয়: সিইসি
দেশে নির্বাচনের সড়কটা খুব মসৃণ নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সড়কটা খুব মসৃণ নয়। এটা সুইডেন বা নরওয়ের মত ওই ধরনের মসৃণ নয় বা নিউ জিল্যান্ডের মতো নয়। বিভিন্ন কারণে আমাদের নির্বাচনের সেই সড়কটা অনেকটা বন্ধুর। সেখানে সকলকে চেষ্টা করতে হবে একটা সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য।’
সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা/ বার্তা প্রধান ও সিনিয়র সাংবাদিকদের প্রায় ২৭ জন অংশগ্রহণ করেন। প্রথমে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের কথা শোনার পর বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আমরা অহেতুক সংলাপ করছি না বা আপনাদের ডেকে অহেতুক কষ্ট দিচ্ছি না। সংলাপ ফলপ্রসূ হবে। আগেও কয়েকটা সংলাপ করেছে সবগুলোর সারসংক্ষেপ আমরা জানাব।
সিইসি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে এর মধ্যেই অনেক কথা উঠেছে। আমরাও চার-পাঁচটা সভা করেছি, আরও করব। অনেকে ইভিএমে পক্ষে বলেছেন। ইভিএম এর সুবিধা হচ্ছে এখানে পেশী শক্তির ব্যবহার কিছুটা হ্রাস করতে পারে। যেখানে ছিল দিয়ে ব্যালট বাক্স পূরণ করা যায় কিন্তু ইভিএমে আমি যদি টিপ না দেই তাহলে কিন্তু ওপেন হবে না। ভালো সুবিধা আছে তার পরেও বিভিন্ন অসুবিধার কথা বলেছেন। আমরা বিষয়গুলো স্টাডি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ওপেন হতে চাই। কেউ কেউ ইভিএম এর বিপক্ষে বলেছেন, একেবারে বিপক্ষে বলেন নাই। তবে কেউ কেউ বলেছেন যে ত্রুটি আছে সেগুলো ঠিক করতে হবে। আমরাও সেটা চেষ্টা করব।’
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে সকলের অভিমতের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সকলেই বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক হওয়া উচিত। অধিকাংশই বলেছেন। তবে আবার কেউ কেউ বলেছেন যে কোন দল নির্বাচনে আসল কি আসল না সেটা আমাদের দেখার দায়িত্ব না। এটা নির্বাচন কমিশনের দেখার বিষয় না। আমরা জাস্ট ভোট আয়োজন করব। নির্বাচনে পক্ষ প্রতিপক্ষ মাঠে গিয়ে একটা ব্যালেন্স তৈরি করে। ব্যালেন্স ভারসাম্য যদি না থাকে তাহলে নির্বাচনটা সহজ হয় না। আমরাও মনে করি নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়া উচিত। এখানে দুটো পক্ষ থাকে দুই পক্ষকে মাঠে খেলতে হয়। তাহলে নির্বাচনটা ওই দিক থেকে সহজ হয়।’
সিইসি বলেন, নির্বাচনে ট্রান্সপারেন্সি খুব গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের সময় ভেতরে ক্যামেরা দিয়ে বাইরে মনিটর দিয়ে যদি লাইভ সম্প্রচার করা যায় সেটা নিয়েও আমরা নিজেরা আলোচনা করেছি।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য পর্যবেক্ষক অত্যাবশকীয় বলে মনে করেন সিইসি। তিনি বলেন, নির্বাচন অবজার্ভ করতে হয়। জাতীয় পর্যবেক্ষক আপনারা আছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক যারা আছেন তাদের যদি একটা বিচরণ থাকে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে তাহলে তারা রিপোর্ট করতে পারেন। একটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে সার্টিফাইড করার জন্য ওই ধরনের পর্যবেক্ষক প্রয়োজন আছে।
নির্বাচন কমিশন তথ্য দিতে প্রস্তুত জানিয়ে বলেন, আমাদের তথ্য দিতে হবে, আপনাদেরকে তথ্য আদায় করার চেষ্টা করতে হবে। মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আপনারা শক্তি সৃষ্টি করতে পারেন। আপনারা জবাবদিহিতা সৃষ্টি করতে পারেন। মিডিয়াকে বেশি ভয় পাই। কি সব আপনারা লেখে আমার জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলতে পারেন, সেটা তো আর আমি জানি না। কাজেই কিছুটা ভিতি তো থাকবেই।
সততা ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব স্পৃহা এবং কমিটমেন্ট, প্রতিশ্রুতি আমাদের আছে, থাকবে। যদি নির্বাচন সম্পর্কে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য আমাদের কাছে আসে, আপনারাও দিতে পারেন। সেখানে শুধু সাহস না আমাদের দায়িত্ব হয়ে যাবে তখন সেই কেন্দ্র বা পুরো সংসদীয় আসনের নির্বাচন নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্বের অংশ। আপনাদেরও দায়িত্ব হবে সেই জিনিসটাকে সঠিকভাবে তুলে ধরা, বিকৃতভাবে নয়।
আইনে অনেকগুলো বিধান থাকলে যেগুলো আমাদের প্রায়োগিক সামর্থ্য বাড়াতে হবে। আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকবে নির্বাচনটা অবাধ করা। ওটা যেন হয় সেদিকে আমাদের একটা লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সেটা নিশ্চিত করতে যা যা করণীয় সেটা আমাদের করতে হবে।
আপনারা বলেছেন খাদের কিনারে আশার আলো দেখছেন। আমরাও আপনাদের কাছ থেকে প্রেরণার শক্তি পাচ্ছি। যদি আপনারা প্রেরণা প্রদান এবং শক্তি প্রদান বন্ধ করে দেন তাহলে আপনাদের আশার আলো দেখার অবস্থানটা ক্ষীণ হয়ে আসবে।
ভোটাধিকার প্রয়োগ সম্পর্কিত বিষয়ে বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে যেন মানুষ ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করতে পারে, সেটা আমরা কতটুকু নিশ্চিত করতে পারব সেদিকে আমাদের লক্ষ্য থাকবে। আপনাদেরও দৃষ্টিটা সেদিকে থাকা প্রয়োজন।
ভোটে অনেক সময় কারচুপি উৎকোচ প্রদান ইত্যাদি নানা কথা আমরা শুনে থাকি। টাকা দিয়ে আগের রাতে ভোট কিনে নেওয়া হয়েছে, কোরআন শরীফের উপর হাত রেখে টাকা নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন রকম অভিযোগ আসে, এগুলোর বিরুদ্ধে আইনি বিধান আছে কিন্তু সেই বিধানগুলো প্রয়োগ করা কঠিন। কে কাকে টাকা দিল কে ভোট কিনল এগুলো আসলে সেনসিটাইজ করা।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, মিউনিসিপাল নির্বাচন হবে। সকল ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করব সামর্থ্য বৃদ্ধি করতে, দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এবং ভোটাধিকার যাতে প্রয়োগ হয় সেটিকে নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। আমাদের এই চলার পথে আপনাদেরও সারথী হতে হবে।
এ সময় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবির খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।
গণমাধ্যম ব্যক্তিদের মধ্যে সংলাপে অংশগ্রহণ করেন বাসস এর প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, মনজুরুল আহসান বুলবুল, একাত্তর টিভির প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু, বিএফইউজে মহাসচিব দীপ আজাদ, রাশেদ চৌধুরী, গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ, জাহিদ নেওয়াজ, জহিরুল আলম, মো. মঞ্জুরুল ইসলাম, জ ই মামুন, তালাত মাহমুদ, রেজওয়ানুল হক, এস কে নজমুল হক সৈকত, কে এম জিয়াউল হক, আশিস সৈকত, সৈয়দ আশিক খান, রাহুল রাহা, তুষার আব্দুল্লাহ, ড. আব্দুল হাই সিদ্দিক, মুস্তবা দানিশ, মাসুদ কামাল, বোরহানুল হক সম্রাট, মানশ ঘোষ, ফাহিম আহমেদ প্রমুখ।
এসএম/এমএমএ/