কনস্টেবল হচ্ছেন এএসপি
ডিউটির পাশাপাশি ১৩-১৪ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন হাকিম
৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে পুলিশ ক্যাডারে (এএসপি) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন আব্দুল হাকিম। কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেওয়া হাকিম এখন স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) নায়েক পদে কর্মরত রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাতে এই প্রতিবেদকের কথা হয় আব্দুল হাকিমের সঙ্গে। চাকরিরত অবস্থায় কী করে বিসিএস পরীক্ষার যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাবা ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষার কয়েকদিন আগে তিনি মারা যান। শোক আর কষ্ট নিয়ে কোনোরকম পরীক্ষার সিটে বসতে হয়েছিল। ফলও তেমন ভাল হয়নি। এরপর টানাটানির সংসারে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হওয়ার সুযোগ ছিল না।’
আব্দুল হাকিম বলেন, ‘বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা, তিন জনের প্রাপ্য রেশন আর বড় ভাইয়ের সামান্য আয়ে কোনো রকমে চলছিল পাঁচ ভাই-বোন আর মাকে নিয়ে বিশাল সংসার। এই অবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেই ২০১৩ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে আবেদন করি। চাকরিটা মিলে যায়।’
চাকরি পেয়েও পড়াশোনা চালিয়ে যান আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘প্রথমে পোস্টিং হলো গাজীপুরে শিল্প পুলিশে। শিল্প পুলিশে ডিউটি একটু কমই ছিল। কয়েক ঘণ্টা ডিউটি করলে বাকি সময়টায় কোনো কাজ থাকে না। সেই সময় ভর্তি হয়ে গেলাম নরসিংদী সরকারি কলেজে। ডিউটির ফাঁকে অবসর সময়টা পুরোপুরি লাগালাম পড়াশোনার কাজে। ২০১৬ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করলাম।’
‘স্নাতক সম্পন্ন করাটা সহজ ছিল না আমার জন্য।’ বলে চলেন আব্দুল হাকিম, ‘২০১৫ সালে পোস্টিং হয়ে গেল ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি)। পোস্টিং ছিল পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) বিভাগে। মিরপুরের পিওএম ব্যারাকে থাকতাম। শিল্প পুলিশ থেকে ডিএমপিতে এসে ডিউটি বেড়ে গেল অনেক কাজ। লাইফ আগের চেয়ে অনেক হার্ড হয়ে গেল। প্রতিদিন ডিউটি করতে হয়।’
আবদুল হাকিম বলেন, ‘ডিএমপিতে আসার পর নানা জায়গায় ডিউটি করতে হতো। এত হার্ড ডিউটি আগের তিন বছরের শিল্প পুলিশের চাকরিতে আমি কখনোই পাইনি। তখন আমার গ্রাজুয়েশন লাস্ট ইয়ার (২০১৫ সাল) চলছিল। একদিন ডিউটি পড়ল আমিন বাজার সেতুর নিচে, গাবতলী এলাকায়। ওখানে এত মশা কামড়াচ্ছিল, সারারাত যে কীভাবে কাটল! তখনই মনস্থির করে ফেললাম–এভাবে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরিতে থেমে থাকা যাবে না। আরও পড়াশোনা করতে হবে। পুলিশেরই ভালো কোনো পদে বা অন্য ভালো কোনো চাকরি করতে হবে। আমার শিক্ষকতা করার ইচ্ছে ছিল।’
তিনি বলেন, ‘স্নাতক সম্পন্ন করে পদোন্নতি পেয়েছিলাম; কিন্তু সেই রাতের জেদ তখনও কাটেনি। পিওএম থেকেই গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে ফেললাম। গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরই আমার নায়েক র্যাংক লাগল। নায়েক র্যাংক পাওয়ার পর পোস্টিং হলো স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নে। সেখানে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ ছিল। তখন ডিউটির পাশাপাশি ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা পড়াশোনা শুরু করলাম। রাত ২টা পর্যন্ত পড়তাম। আবার সকাল ৭টায় যখন রোলকল হতো, তখন আমার ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থা। মাঝে মাঝে রোলকলের দায়িত্বে থাকা এএসআই বকতেন; কিন্তু তখন আমার রাগ চেপে গেছে। এই চাকরিতে থাকলে চলবে না, আরও অনেকদূর যেতে হবে।’
আব্দুল হাকিম বলেন, ‘অবশেষে সংগ্রাম করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে আমার। একটা বিষয় হলো–মানুষ চেষ্টা করলে অনেক কিছু পারে। নিজেকে দিয়ে বুঝতে পারলাম। সবার কাছে দোয়া চাই–আমি যেন দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারি।’
কেএম/এসএ/