‘যত বাধাই আসুক মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাব’
দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জীবনটা দিতেও কুণ্ঠিত নন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাবা মা ভাইকে হারিয়ে দেশের মানুষের মাঝে অকুন্ঠ স্নেহ ভালবাসা সমর্থন পেয়েছি। আপনাদের জন্য জীবনটা দিতেও আমি এতটুকু কুণ্ঠিত না। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যত বাধাই আসুক, তা করে যাবই। সবাই সুন্দর জীবন পাবে। উন্নত জীবন পাবেন, সুন্দর থাকবেন। যতক্ষণ আমার শ্বাস আছে ততক্ষণ আপনাদের পাশে আপনাদের উন্নয়নের কাজ করে যাব।’
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় ‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ: উন্নয়নের নতুন জোয়ার, বদলে যাওয়া কক্সবাজার শীর্ষক জমকালো উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি প্রদান উপলক্ষে দেশের বিশেষ কয়েকটি স্থানে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপনের অংশ হিসেবে কক্সাবাজারে অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ‘ও জোনাকি’ গানের ভিডিওচিত্র চিত্রায়নে কক্সবাজারের সাফল্য তুলে ধরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে এ উৎসব হয়।
অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মোস্তফা কামাল। সৈকত প্রান্তে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তার আগে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
মন্ত্রীদের বক্তব্য পর্বটি পরিচালনা করেন মূখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানে ‘জোরশে চলো বাংলাদেশ’ বাংলাদেশ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। শতভাগ বিদ্যুাতায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে ‘ও জোনাকি’ ভিডিওচিত্র পরিবেশন করা হয়।
টানা মেয়াদে প্রতিটি নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিবারেই নতুন নতুন একটা থিম নিয়ে আসার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেই, সেটা আমরা ভুলে যাই না। ইশতেহার সামনে রেখেই আমরা উন্নয়ন প্রকল্প নেই। কাজেই এবারও আমাদের যেটা ছিল তরুণ সমাজকে একটা উন্নত জীবন দেওয়া। শিক্ষায় দীক্ষায় আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষায় যেন তারা গড়ে উঠতে পারে। তাই আমাদের মূল লক্ষ্যটা ছিল এবং থিমটা ছিল তারুণের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি।
এই তারুণ্য আমাদের বিরাট সম্পদ। তাদের কর্মসংস্থান তাদের শিক্ষা দীক্ষা তাদের ভোকেশনাল ট্রেনিং সেইভাবে আমরা ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছি। কক্সবাজারের কোন অংশ বাদ যাবে না। সব এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে আরও উন্নয়ন হবে বলে অবহিত করেন তিনি।
সকলের সহযোগিতায় এই উন্নয়নের কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থদের পুর্নবাসন করে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত করেছি শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। বাংলাদেশের কোন মানুষ গৃহহারা থাকবে না।
এসময় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার বাবা তার সারাটা জীবন এদেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। আমরা সন্তান হিসেবে খুব অল্প সময় তাকে পেয়েছি।
বাংলাদেশের জনগণকে সবথেকে বেশি ভালবাসি ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সেই সাক্ষাৎকারের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে মানুষগুলোকে তিনি এত গভীরভাবে ভালোবাসতেন সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করা এটাই তো আমার একমাত্র লক্ষ্য। নিজের জীবনে কোন চাওয়া পাওয়া নাই। শুধু একটা কথাই চিন্তা করি দেশের মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম। কতটুকু দিতে পারলাম।বাংলাদেশের মানুষ যখন ভালো থাকে, মানুষের মুখে হাসি ফোটে এটাই তো সবথেকে জীবনের বড় পাওয়া। এর থেকে বড় পাওয়া তো আর কিছু নেই।
অনেক বাধা অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার আমার উপর আঘাত এসেছে। আমি কিন্তু পিছিয়ে যাইনি। আমি চেষ্টা করে গেছি এদেশের মানুষের জন্য কিছু করে যেতে। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে।
জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যাচ্ছি বলেই দেশবাসী আজ তার শুভফল পাচ্ছে বলেও মনে করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা ধরে রেখেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। যেন আমরা উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ করতে পারি। যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল।
তিনি বলেন, তবে হয়ত আমারও বয়স হয়েছে, কিন্তু নিশ্চয়ই একবার আসব কক্সবাজার। সকলের সঙ্গে আবার দেখা হবে।
জীবন-জীবিকার সুযোগ আজকে যে অপ্রতিরোধ্য গতি এগিয়ে যাচ্ছে, এ অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত রাখতে পারি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। সেই প্ল্যানও আমি করে দিয়েছি। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ করে দিয়েছি।
দেশপ্রেম না থাকলে, দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ না থাকলে, দেশের মানুষের উপর বিশ্বাস-আস্থা না থাকলে কখনো কাজ করা যায় না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই আস্থা বিশ্বাসটাই হচ্ছে আমাদের সবথেকে বড় শক্তি। মানুষের বিশ্বাস এবং মানুষের আস্থা এবং মানুষের ভালোবাসাই আমাদের প্রেরণা।
তিনি বলেন, বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছিলাম আমরা দুই বোন। যেদিন ঢাকায় ফিরে আসি ১৯৮১ সালে। যখন যাই সেই ৭৫’র ৩০ জুলাই। ঢাকা তেজগাঁও এয়ারপোর্ট থেকে প্লেনে উঠি। কামাল, জামাল ও রাসেল সবাই ছিল এয়ারপোর্টে। কিন্তু যখন ফিরে আসি বাবা মা ভাই কাউকেই পাইনি। কিন্তু পেয়েছিলাম এদেশের লাখো মানুষ। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা ছুটে গিয়েছিল। কাজেই তারাই সেদিন থেকে আমার আপনজন এই বাংলাদেশের মানুষ। তারাই আমার পরিবার। তারাই আমার সব। তাদের জন্যই আমি কাজ করি এবং আপনারা বাংলাদেশের মানুষই আমার সবথেকে আপনজন এবং আমার পরিবার হিসাবে মনে করি।
কক্সবাজারবাসীর সঙ্গে ভবিষ্যতে দেখা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা যে মর্যাদা পেয়েছি। দেশে-বিদেশে আজকে সেই মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঙালি উঁচু করে চলতে পারে। কাজেই এ চলা যেন থেমে না যায়। এইটুকুই শুধু আমার চাওয়া।
এসএম/এমএমএ/